টাকার লোভেই মা-মেয়েকে জবাই করে খুন করেছিল বেলাল

চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাটে মা-মেয়েকে খুনের দায়ে দীর্ঘ আট বছর পর মো. বেলাল হোসেনকে (২৭) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে অপর আসামি টিটু সাহাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বেগম সিরাজাম মুনীরা এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়।

দণ্ডির বেলাল হোসেন কুমিল্লা মুরাদনগর থানার কোরবান পুর বাজারের বাড়ির মো. মন মিয়ার ছেলে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় তিনি নগরের সদরঘাট থানার দারোগার হাট এমরান সড়কের নজরুল মঞ্জিলের ১০ নম্বর রুমে থাকতেন।

অপর আসামি টিটু সাহা (৪৬) কুমিল্লা মুরাদনগর থানার বাখরাবাদ রঞ্জিত মাস্টার বাড়ির নেপাল সাহার ছেলে। তিনি নগরের কোতোয়ালি থানার কোরবানীগঞ্জে থাকতেন এবং বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগর এলাকার ইছহাকের পুলের পাশে মৌমিতা জুয়ালার্সে কর্মরত ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পিপি দীর্ঘতম বড়ুয়া দীঘু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মো. বেলাল হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামি টিটু সাহাকে ৪১১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

পিপি আরও বলেন, এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে টুকরো করে শিশু আয়াতকে খুন করেছে আবীর, মা-বাবা নির্দোষ

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নগরের সদরঘাট এলাকার দক্ষিণ নালাপাড়ার মোবাশ্বের মিয়ার ভাড়া বাসায় দুছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ থাকতেন কুমিল্লা মুরাদনগর থানা এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলম প্রকাশ চেয়ারম্যান। তিনি ছাগলের মাংস বিক্রি করতেন।

২০১৫ সালের ৭ মে সকাল সোয়া ৭টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকানে চলে যান শাহ আলম। কিছু সময় পর পৌনে ১০টার দিকে তার শ্যালক আলাল ফোন কলে জানান, তার স্ত্রী ও মেয়ে বাসায় রক্তাক্ত পড়ে আছে। এরপর তিনি দ্রুত বাসায় এসে দেখেন স্ত্রী নাছিমা বেগম ডাইনিং রুমে ও ১০ বছরের মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী শৌচাগারে জবাই করা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ ঘটনায় শাহ আলম বাদী হয়ে নগরের সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এছাড়া ঘরের আলমারি থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন মামলার অভিযোগে।

মামলা তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের একই বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর গোয়ান্দা বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ আব্দুর রউফ আদালতে দুআসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে জানা যায়, খুনের দায়ে দণ্ডিত আসামি বেলাল হোসেন ও শাহ আলম সম্পর্কে খালাতো ভাই হন। একদিন শাহ আলম তার স্ত্রী নাছিমার কাছ থেকে টাকা চাইলে তিনি আলমারি খুলে টাকা বের করে দেন। এসময় বাসায় উপস্থিত থাকা বেলালের চোখ পড়ে ওই আলমারির দিকে। সেদিন থেকেই বেলাল চুরির পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে মাংসের দোকান থেকে একটি ছুরি এনে রাখেন বেলাল। ঘটনার দিন শাহ আলম দোকানে চলে যাওয়ার পর সকাল ৯টায় স্ত্রী নাছিমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। এসময় নাছিমা দুছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে বলেন শাহ আলমকে। কিন্তু তিনি কর্মব্যস্ত থাকায় যেতে পারেননি।

দুছেলে স্কুলে চলে গেলে ফাঁকা ঘরে মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ ছিল না। এসময় বেলাল বাসায় ঢুকে প্রথমে শাহ আলমের স্ত্রী নাছিমাকে এবং পরে মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনীকে জবাই করে হত্যা করেন। পরে আলমারিতে থাকা স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।

বেলাল হোসেনের দেওয়া জবানবন্দি থেকে জানা যায়, হত্যার পর তিনি সদরঘাট থানার সাততলা মাঠে গিয়ে একটি বড়ই গাছের নিচে চুরি করে আনা জিনিসপত্র লুকিয়ে চুল কাটতে যান। এরপর ঘটনাস্থলে এসে বাসা থেকে লাশ নামাতে সহযোগিতাও করেন। চুরির দুটি মোবাইল ফোনের একটি বান্ধবীর কাছে ও অপরটি পাশের রুমের ভাড়াটিয়ার কাছে রাখেন।

মামলা পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর পিপি আব্দুর রশিদ ও অতিরিক্ত পিপি বিহি চক্রবর্তী।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!