জমি ফেটে চৌচির—মরে যাচ্ছে আমনের চারা, বৃষ্টির প্রতীক্ষায় পেকুয়া

অনাবৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় আমন চাষের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানির অভাবে জমিতে রোপিত আমন ধানের চারা মারা পড়ছে। প্রচণ্ড তাপদাহ ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে পেকুয়ায় আমন চাষের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ফলে কৃষকরা জমিতে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ করেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টি না থাকায় এসব চারা রোদে শুকিয়ে মারা পড়ছে। ধানের চারাগুলো এখন ফসলি বিলে হলদে রঙ ধারণ করেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় কৃত্রিম উপায়ে সেচ দিয়ে জমিতে ফসল ফলানো হয়েছে। অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে এসব ফসলেও লালচে-মরিচা রঙ ধারণ করেছে। ফসলগুলোতে মড়ক ও ছত্রাকের মতো জটিল রোগ সংক্রামিত হচ্ছে।

উপজেলার টইটং ইউনিয়নের জালিয়ারচাং, বড়বিল, টেইট্যাখালি বিল, কাচারীঘোনা, নিত্যান্ত ঘোনাসহ অনেক স্থানের ফসলি জমিতে লবণাক্ততা গ্রাস করেছে। সমুদ্রের নোনা পানি নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। এতে ৫ থেকে ৬টি ফসলি বিলে আমন ধানের চারা মারা পড়ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টইটংয়ের নিত্যান্ত ঘোনায় বিলে মারা পড়ছে আমন ধানের চারা। একই ইউনিয়নের কাচারীঘোনায়ও জমির সদ্য রোপণ করা আমন চারায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ৩নং ওয়ার্ডের টেইট্যাখালি বিলেও বিশাল অংশে ধানের চারা হলদে হয়ে গেছে। ওই বিল এখন ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। জালিয়ারচাং বড় বিলেরও একই অবস্থা। টইটং ইউপি ভবনের পূর্ব পাশে বড়পাড়া বিলে ধানের চারা মারা পড়ছে।

স্থানীয়রা জানান, টইটং খালের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। জোয়ার-ভাটায় এসব বিলে নোনা পানি প্রবেশ করায় জমিতে মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে মাটির রাসায়নিক ভৌত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ধানের চারা মারা পড়ছে।

চাষি নুরুল হক জানান, প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে এ বছর জমি থেকে ফসল তোলা প্রায় অনিশ্চিত। পাওয়ার টিলা বাবদ প্রতি কানিতে আড়াই হাজার টাকা। আগামসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কী করব বুঝছি না।

চাষি আক্তার আহমদ জানান, আমরা চরম সংকটের মধ্যে রয়েছি। কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যাবে সেই চিন্তায় সবাই অস্থির।

নিত্যান্ত ঘোনার চাষি জসিম উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, নুর হোসেন, জিয়াবুল হকসহ আরও কয়েকজন জানান, ছনুয়া নদীর জোয়ারের পানি ডাকাত্যাঘোনা হয়ে বিলে ঢুকেছে। বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন রোপিত চারা মারা পড়ছে।

এরশাদ আলী ওয়াকফের কার্যকারক নুরুন্নবী জানান, চাষিরা তাদের অসুবিধাগুলি আমাদেরকে বলেছেন। তবে আমার মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে করার কিছুই নেই। ইউএনও স্যার ওয়াকফর অফিসিয়াল মোতোয়ালি। তিনি মানবিক। তিনি মওকুফ করলেও মালিকরা সেটি সমর্থন নাও করতে পারেন।

যোগাযোগ করা হলে টইটংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকাদ্দেস মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আসলে বিষয়টি প্রাকৃতিক। এ মুহূর্তে সম্পূরক সেচের বিকল্প আমরা দেখছি না। জোয়ার যাতে ফসলি জমিতে প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।

এদিকে পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নে আমনের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উঁচু স্থানের অনেক জমি এখনো অনাবাদি থেকে গেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় এসব জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সদরের জালিয়াখালী, বকসু চৌকিদারপাড়া, বটতলীয়া পাড়াসহ দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের অনেক জমিতে এখনো ফসল ফলানো যায়নি। মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা।

রাজাখালীসহ উপকুলের তিনটি ইউনিয়নে প্রতিবছর বর্ষায় লবণ মাঠের জমিতে প্রচুর ধান চাষ হতো। অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর এসব জমিতে চাষাবাদ করা যায়নি। বারবাকিয়া ইউনিয়নেও অনেক জমি অনাবাদি থেকে গেছে। কাদিমাকাটা, বারাইয়াকাটা অংশে জমির ফসল হলদে রঙ ধারণ করেছে।

পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় বলেন, যেসব জায়গায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে সেখানে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এর সমাধান আসবে না। বৃষ্টি হতে হবে। আমরা সম্পূরক সেচের পরামর্শ দিচ্ছি।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, রাবার ড্যাম সচল করা হয়েছে। মিষ্টি পানির উৎসগুলোতে যাতে নোনা পানি প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরশাদ আলী ওয়াকফের অফিসিয়াল মোতোয়ালি হিসেবে বলছি, আমাদের জমি চাষ করছে এমন ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিতভাবে আমাদেরকে আবেদন করে জানাতে হবে।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!