চট্টগ্রাম রেলে প্রতারণার ফাঁদ, টাকা মেরে খাচ্ছে দুই ভাই সাকিব—তানিম

সুদর্শন দুযুবক। সম্পর্কে চাচাত ভাই। দুজনই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। বাইরের দিকটা সুন্দর হলে এই দুযুবকের ভেতরটা কদর্যে ভরা। সুন্দর চেহারা পুঁজি করে লোক ঠকানোই তাঁদের পেশা।

এ দুযুবকের একজন ইরফান চৌধুরী সাকিব, অন্যজন শাহাদাত হোসেন তানিম। প্রতারণার জাল বিছিয়ে তাঁরা দুজন মানুষ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা। আর টাকা ফেরত চাইতে গেলেই দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি!

সুদর্শন ওই দুযুবকে হাতে প্রতারণার শিকার হওয়াদেরই একজন রেলওয়ের প্রথম সারির ঠিকাদার মো. জামাল উদ্দিন (৪০)। প্রতারিত এই ঠিকাদার ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালী থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর মামলাও করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন।

আরও পড়ুন : ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা—হোটেলে থাকা হার্টথ্রুব ‘নায়িকা’ পেয়েছিলেন ১০ কোটি!

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাকিব (২৮) ও তানিম (৩০) পটিয়ার পশ্চিম ডেঙ্গাপাড়ার এমপি সিরাজ বাড়ির বাসিন্দা। সাকিবের বাবার নাম মো. ইউসুফ চৌধুরী।

তানিম কর্ণফুলী বিল্ডার্স নামে একটি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী৷ এই কোম্পানির নামেই নিয়মিত রেলে কাজ করেন তিনি। কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেলে সেটা নকল করে সাকিবকে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। এভাবে তারা অনেক লোককে প্রতারিত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মো. জামাল উদ্দিনের পূর্ব পরিচিত ছিলেন সাকিব ও তানিম। সে সুবাদে জামালের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে রেলওয়েতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ওই দুই যুবক।

তাঁদের অনুরোধে ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহারের অনুমতি দেন জামাল উদ্দিন। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার খরচ এবং ওয়ার্ক অর্ডার নেওয়ার জন্য দফায় দফায় তাদের ৯ লাখ টাকাও দেন।

এর কিছুদিন পর ওই লাইসেন্স দিয়ে দুটি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার কথা জানায় সাকিব ও তানিম। এর একটি ৯ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা এবং অপরটি ৬৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার প্রকল্প।

কাজ পাওয়ার পর শুরু টাকা নিয়ে সমস্যা। পর্যাপ্ত টাকা নেই তাদের হাতে। তাই তারা যান জামালের কাছে। ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে টাকা লোন নেওয়া যাবে বলে জানান সাকিব ও তানিম।

তাঁদের কথায় সায় দেন জামাল। এরপর ওয়ার্ক ওর্ডারের বিপরীতে ওয়ান ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখায় লোনের জন্য আবেদনও করেন জামাল৷ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা লোন দেয় ব্যাংক। জামাল ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন সাকিব ও তানিমের হাতে।

এরপর ব্যাংক লোনের কিস্তি পরিশোধের সময় আসলে সাকিব ও তানিম টাকা দিতে অনীহা দেখায়। সেইসঙ্গে কাজেও কোনো অগ্রগতি নেই। ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে তাদের রূপ।

তাদের এমন আচরণে সন্দেহ হলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নেন জামাল উদ্দিন। তিনি জানতে পারেন, সাকিব-তানিমের দেওয়া ওয়ার্ক অর্ডারটি আসলে ভুয়া!

এরপর তিনি সাকিব-তানিমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়। কিছুদিন পর উল্টো জামালকে বড় ক্ষতি করার হুমকি দিতে থাকে তারা।

আরও পড়ুন : ‘জিনের বাদশা’ সেজে প্রতারণা করত ৫ যুবক

প্রতারণার শিকার জামাল উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাকিব-তানিম আমার পরিচিত। তাদের কথা আমি বিশ্বাস করেছি। ভেবেছিলাম, আমার লাইসেন্স কাজে লাগিয়ে যদি তারা কিছু করতে পারে তাহলে করুক। এমনকি কাজের জন্য তাদের আমি আর্থিক সহায়তাও করেছি। ব্যাংক লোনও নিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ব্যাংকও দেখলাম ওয়ার্ক অর্ডার যাচাই না করে লোন দিয়েছে। সাকিব-তানিমের সঙ্গে সব লেনদেনের প্রমাণ আছে আমার কাছে। মানি রিসিপ্টের মাধ্যমে আমি তাদের টাকা দিয়েছি।

এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মো. নেজাম উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মামলার মূল অভিযোগটা ওয়ার্ক অর্ডার নকল করে প্রতারিত করার। এখন ওয়ার্ক অর্ডার নকল করা হয়েছে কিনা তা জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি আমরা। অন্যান্য কাগজপত্রগুলোও যাচাই করছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

তবে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাকিব এবং তানিমের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!