চট্টগ্রাম কাঁপাচ্ছে ডেঙ্গু, রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো

আতঙ্ক ছড়িয়ে চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু। গত কয়েক মাসের তুলনায় চলতি অক্টোবরে ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতাল ছাড়িয়ে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। ফলে নগরের বেসরকারি হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ জন। গত তিন দিনে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ১৩ অক্টোবর সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬১ জন, ১৪ অক্টোবর কিছুটা কমে ৩০ জন এবং সর্বশেষ গতকাল ১৫ অক্টোবর সবচেয়ে বেশি ৮৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে৷

এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালেই ৫৩ জনের দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু ধরা পড়ে। সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর নগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত নামে ৯ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়।

সিভিল সার্জনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চমেক হাসপাতালে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে সরকারি হাসপাতাল ছাড়িয়ে এখন বেসরকারি হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ভর্তির সংখ্যা। চমেক হাসপাতালের পর চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, সিএসসিআর, এভারকেয়ারসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী।

জানতে চাইলে পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম তালুকদার জিয়াউর রহমান শামীম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন ২১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। আমাদের ১৫৩ কেবিনের সবকটি এখন রোগীতে পরিপূর্ণ। ডেঙ্গু রোগীর চাপ হঠাৎ বেড়েছে।

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. সাহেদ উদ্দিন আহমদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীর তীব্র জ্বর হয়। প্রচণ্ড দুর্বলতার পাশাপাশি রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়। সেই সাথে শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, বমি এবং কাশি থাকছে। স্পেসিফিকভাবে ডেঙ্গু রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগীকে অবশ্যই একটা নিয়মের মধ্যে যেতে হবে। পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে এবং বেড রেস্ট জরুরি। দিনের বেলা ঘুমানোর সময় মশারি লাগিয়ে ঘুমাতে হবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর যদি কারো ৩-৪ দিন বা ৫ দিন তীব্র জ্বর, প্রেশার কমে যাওয়া, চামড়ায় লাল দাগ, প্লাটিলেট কমে যাওয়াসহ আরো জটিলতা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো জরুরি।

এদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠতে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। এ সময় ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের জুস, পাকা পেঁপে, পেঁপে পাতার রস ইত্যাদি খাবার বেশ উপকারী। রোগীকে বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে কম বয়সী শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া ডেঙ্গুর পাশাপাশি আনুষঙ্গিক রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদসহ কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গুর হার বেশি। আর যেসব ভবনে ছাদবাগান রয়েছে সেখানে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পাশাপাশি এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে জ্বর হলে বসে না থেকে ডেঙ্গু টেস্ট করে ফেলা উচিত।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!