চট্টগ্রামে ২ গার্ডের দাপট—ট্রেনে না উঠেই নেন মাইলেজ, বোনাসও

তাঁদের দুজনের পদবি গার্ড। কিন্তু এদের একজন প্রায় পাঁচ বছর ধরে রয়েছেন বিভাগীয় পরিবহন বিভাগের স্টোর শাখায়। অন্যজন প্রধান পরিবহন (সিওপিএস) অফিস সহকারী হিসেবে চার মাস ধরে কাজ করছেন। অথচ দুজন প্রতিমাসে বেতন ও মাইলেজ নিচ্ছেন গার্ড হিসেবেই! যদিও গার্ড সংকটে ট্রেন চালাতে কঠির পরিস্থিতির কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযুক্ত দুজন হলেন— রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সিআরবির পরিবহন শাখার অফিস সহকারী আবদুল কাদের জুয়েল ও পাহাড়তলীর স্টোর শাখার মো. মাকসুদুর রহমান মোহন।

জানা গেছে, গার্ড গ্রেড-১ (বি) মো. মাকসুদুর রহমান মোহন গত পাঁচ বছর ধরে বিভাগীয় পরিবহন অফিস পাহাড়তলী স্টোর শাখায় কাজ করছেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পোশাক ও সরঞ্জাম কেনাকাটাসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন। পুরো অফিসে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। তাঁর দাপটে পরিবহন বিভাগের কর্মচারীরা অনেকটা অসহায়। এছাড়া ছুটির পর প্রায় রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত বিভাগীয় পরিবহন অফিসে জমিয়ে আড্ডা দেন। তিনি নিয়মিত পাহাড়তলীতে অফিস করলেও বেতন ও মাইলেজ নিচ্ছেন গার্ড হিসেবে।

পরিবহন শাখার নথিপত্রে দেখা যায়, মোহন গত পাঁচ বছর ধরে ট্রেনেই উঠেননি। অথচ নিয়মিত বেতন ও মাইলেজ তুলছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি ৩ হাজার মাইলেজ তুলেছেন। এভাবে তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে বেতন ও মাইলেজ তুলছেন।

অন্যদিকে চার মাস আগে গার্ড গ্রেড-১ (বি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও সিআরবি প্রধান পরিবহন (সিওপিএস) অফিস ছাড়েননি আবদুল কাদের জুয়েল। তিনি সেখানে অফিস সহকারীর কাজ করে চলেছেন। তবে তিনি মাইলেজ না নিলেও গার্ড হিসেবে বেতন-বোনাস তুলছেন।

আরও পড়ুন : স্বপ্নের ট্রেন দেখতে চকরিয়ায় জনস্রোত, জীবনে প্রথম ট্রেন দেখলেন আমেনা

পরিবহন শাখার জনবল পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযায়ী, ৬৫ জন গার্ডের পদ শূন্য রয়েছে। গার্ড সংকটের কারণে ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া রেলওয়ে মহাপরিচালকের (ডিজি) নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো অপারেশনাল (ট্রেন চালানোর কাজে নিয়জিত) কর্মচারী দিয়ে অফিসের কাজ করানো নিষেধ। তবে সেই নির্দেশনার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মোহন ও জুয়েল কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গার্ড মাকসুদুর রহমান মোহন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমার পদ গার্ড হলেও বিভাগীয় পরিবহন অফিসে সহকারী হিসেবে কাজ করি। মূলত আমি গার্ড ও অফিস সহকারী দুটোই করি এবং ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে মাইলেজ নিয়ে থাকি।

অভিযুক্ত আরেক গার্ড আবদুল কাদের জুয়েল বলেন, আমি সিওপিএস অফিসে সহকারী হিসেবে কাজ করি। গার্ড পদবি হলেও প্রেষণে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছি। তবে কখনও ট্রেনে উঠিনি।

এ বিষয়ে ট্রেন চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, গার্ড সংকটের কারণে ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হয়। হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টার বাইরে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের নিয়ম থাকলেও তা নেওয়া সম্ভব হয় না। গার্ডদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রেলে না উঠে মাইলেজ নেওয়াটা অনৈতিক কাজ। এমনিতে গার্ড সংকট রয়েছে। তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ হন তাহলে তাকে দিয়ে অফিসের কাজ করানো যায়। তবে গার্ডকে দিয়ে অফিসের কাজ করানোর কোনো সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!