চট্টগ্রামে ১০ হাজার ব্যাটারি রিকশা—ইজিবাইক প্রতিদিন গিলে খাচ্ছে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ বাঁচাতে দেশজুড়ে চলছে নানা তৎপরতা। প্রতিদিন নিয়ম চলছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বাঁচাতে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সময়সীমা। কিন্তু বিদ্যুৎ গিলে খাওয়া একটি সেক্টর এখনও রয়ে গেছে সংশ্লিষ্টদের আড়ালে।

নগরজুড়ে বৈদ্যুতিক চার্জে অবৈধভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত প্রায় ১০ হাজার অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এসব গাড়ি প্রতিদিন গিলছে প্রায় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এরপরও এগুলো বন্ধে এখনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নগরের মূল সড়ক থেকে অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক।

সচেতন মহল বলছে, অবৈধ অটোরিকশার চার্জ স্টেশন বন্ধ করা হলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে দেশের চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

তবে অভিযোগ রয়েছে এসব চার্জ স্টেশন থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে দেখেও না দেখার ভান করে আছে সংস্থাটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাহাড়তলী এলাকার গ্যারেজ মালিক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রতিদিন দুই শিফটের চার্জে একটি ব্যাটারি রিকশায় ৮ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে । প্রতি ইউনিট বলতে এক হাজার ওয়াটের একটি যন্ত্র যদি এক ঘণ্টা ধরে চলে তাহলে সেটি এক ইউনিট। তাহলে একটি ব্যাটারি অটোরিকশা দিনে ৮ হাজার ওয়াট বা ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে নিচ্ছে। এভাবে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজারেরও বেশি ব্যাটারি অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল করছে। যদি ১০ হাজার অটোরিকশা-ইজিবাইক একইসঙ্গে চার্জ নেয় তাহলে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হবে। যা চট্টগ্রামের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। পাশাপাশি চলমান বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বড় বাধার সম্মুখিন হচ্ছে পুরো দেশ।

আরও পড়ুন: কখনো মন্ত্রীর আত্মীয়—কখনো সরকারি বড় কর্তা, ধরা খেল সেই মমতাজ

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরজুড়ে অটোরিকশার চার্জ স্টেশন রয়েছে ২৮২টি। বেশিরভাগ স্টেশনে রয়েছে পোস্ট পেইড মিটার। গুটিকয়েক প্রি-পেইড হলেও বাকি চার্জ স্টেশনগুলো বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অবৈধ লাইন টেনে স্টেশন পরিচালনা করে আসছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের হালিশহর, পতেঙ্গা, দেওয়ানহাট, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, চাঁন্দগাও, নতুন ব্রিজ ও চকবাজার থানা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। শুধু হালিশহর এলাকায় রয়েছে ৭৫টি চার্জ স্টেশন। এছাড়া পতেঙ্গায় ৩০টি, দেওয়ানহাটে ১৮টি, পাহাড়তলীতে ২৫টি, আকরবশাহে ২২টি, চাঁন্দগাওয়ে ৫২টি, চকবাজারে ২৫টি এবং নতুন ব্রিজ এলাকায় ৩৫টি চার্জ স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি স্টেশন বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চোরা লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

চাঁন্দগাও এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের অভিযোগ করে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সরকার দেশের চলমান বিদ্যুৎ সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোকে সচেতনভাবে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু রাতের আঁধারে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বিদ্যুৎ চোরাকারবারিরা গিলে খাচ্ছে সেদিকে নজরদারি নেই।

তিনি আরও বলেন, এই অবৈধ চার্জ স্টেশনগুলো যদি বন্ধ করা হয় সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে অনেকটা সহায়ক হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কোনো অটোরিকশার গ্যারেজে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চার্জ দেওয়ার তথ্য পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আর যারা সরকারি লাইন্সেস নিয়ে বিধি মোতাবেক চার্জ স্টেশন পরিচালনা করছেন তারা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এসব চার্জ স্টেশনের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!