চট্টগ্রামে সবজির দরে ‘সেঞ্চুরি’, বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের ঝাঁজ

চট্টগ্রামের বাজারে ‘সেঞ্চুরি’ করেছে অধিকাংশ সবজির দর। সম্প্রতির বন্যাকে কারণ দেখিয়ে সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির এমন বাড়তি দামে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, কাজির দেউরিসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি তিত করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ৬০-৭০ টাকায়। বরবটি ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা দরে, গত সপ্তাহে এই দুটি সবজি বিক্রি হয়েছিল ৫০-৬০ টাকায়। বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, গত সপ্তাহে এই সবজির দর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকা। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০ টাকা দরে। নতুন মৌসুমের এই সবজি বাজারে আসতেই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।

এছাড়া বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকা। ঢেঁড়স ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল কেজি ৪০ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০-৫০ টাকা। পাকা মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে এটি বিক্রি হয়েছিল ৩০-৩৫ টাকা। কাঁচা মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০-৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামের বাজারে ইলিশ প্রচুর, দাম নাগালের বাইরে

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম কমেছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৪০-২৫০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকা, ৮-১০ দিন আগে এর দাম ছিল ২৭০-২৮০ টাকা।

এছাড়া কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০-৪৫ টাকা, ললিতা আলু ৪০ টাকা এবং দেশি আলু ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

কাজির দেউরি এলাকার ক্রেতা মো. ইয়াছিন বলেন, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ১০০ টাকার বেশি। মাছ-মাংসের দাম বাড়তি, সবজির দাম বাড়তি, কদিন পর পর ডিমের দামও বেড়ে যায়। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাড়তি দামে আমাদের মতো নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস বেড়েছে।

চকবাজার এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, সাধারণত দোহাজারী, চকরিয়া, বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতে সবজি আসে। ওদিকে বন্যার কারণে অনেক খেতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাই সবজির সরবরাহ কমেছে এবং দাম অনেকাংশ বেড়েছে। এখন সীতাকুণ্ড থেকে অনেক সবজি আসছে বাজারে, উত্তরবঙ্গ থেকে লাউ আসছে, নওগাঁ থেকে পটল আসছে চট্টগ্রামের বাজারে। গত কোরবানের ঈদের পর থেকে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম বেশি ছিল। এখন সেগুলো কমে এসেছে। কাঁকরোলের সিজন শেষদিকে তাই এর দাম বেড়েছে, সামনে হয়ত আরও বেড়ে যাবে।

এদিকে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫৫-৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ৩৫-৪০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৩৭-৪০ শতাংশ।

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৩৩ শতাংশ কমেছে আদার দাম। আদা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৩০ টাকা, গত সপ্তাহে এ দর ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা। এছাড়া মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা (চিকন) ও ৯০ টাকা (মোটা), চনার ডাল ৭০-৮০ টাকা। এসব মুদি পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

বহদ্দারহাট এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. নুর আলম বলেন, মূলত আড়ত ও পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। যেমন গতকাল পাইকারি বাজার থেকে রসুন কিনেছিলাম কেজি ১৯০ টাকায়। আজ সেই রসুন কিনেছি কেজি ১৯৮ টাকা দরে। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ করে আমরা বিক্রি করছি কেজি ২২০ টাকা। একইভাবে আমরা পাইকারি বাজার থেকে কেজি ১২৮ টাকা দরে চিনি কিনে বিক্রি করছি কেজি ১৩০ টাকা। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায় বলেই আমরা খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। অথচ দাম বৃদ্ধির জন্য কাস্টমারদের নানান কথা শুনতে হয় খুচরা ব্যবসায়ীদেরকেই।

এদিকে চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ডিমের দাম গত ৩-৪ দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে হাঁসের ডিম প্রতিডজন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৫০ টাকা (লাল) ও ১৪৫ টাকা (সাদা)।

এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩১০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি ৫৫০ টাকা।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!