চট্টগ্রামেও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি—শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও, ‘অযৌক্তিক আন্দোলন’ বলছেন শিক্ষাবিদরা

রাজধানী ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামেও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন হয়েছে। এ দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভও করলেন কিছু পরীক্ষার্থী। তবে পরীক্ষার ঠিক আগমুহূর্তে এমন আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলছেন শিক্ষাবিদরা।

বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুর থেকে শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে কিছু পরীক্ষার্থী। এসময় দুদফা দাবিতে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের ভেতরে আটকে রেখে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ। এর আগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এসব শিক্ষার্থী।

পরে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করে চলে যায়। তবে দাবি পূরণ না হলে ফের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করা হবে বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী আসিফ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা পরীক্ষা দিতে রাজি না। শুধু আমরা নয়, সারা বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর একই দাবি। ঢাকায়ও আন্দোলন হয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

মাহমুদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরাতো অটো পাস চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি সময় কিংবা সংক্ষিপ্ত নম্বরে পরীক্ষার। কারণ আমরা ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমাদের পরীক্ষা ৫০ নম্বরে নিতে হবে, না হয় পরীক্ষা দুমাস পিছিয়ে দিতে হবে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলছেন অনেকে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি গত বছরই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এপ্রিলের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে আগস্টে। তাহলে শেষ মুহূর্তে এসে শিক্ষার্থীরা কীসের আন্দোলন করছে? এই আন্দোলনের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষার্থী অনেকেই নেই। গুটিকয়েক শিক্ষার্থী অযৌক্তিক আন্দোলন করছে।

আরও পড়ুন : এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ১৭ আগস্ট

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি দাবি। কারণ প্রতিটি শিক্ষার্থী কলেজে টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফরম ফিলাপ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়েছে৷ তারপরেও পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে কিছু শিক্ষার্থীর এ ধরনের আন্দোলন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ৷ কারণ এখন কোনো মহামারি বা অন্য কোনো দুর্যোগ নেই৷ মূলত এ ধরনের আন্দোলন একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের মে মাসে জানিয়ে দেওয়া হয় এবারের এইচএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণ নম্বরে। প্রতিটি বিষয়ে ৩ ঘণ্টায় হবে পরীক্ষা। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষা ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য অন্য সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হবে।

এদিকে শহিদুল আলম নাহিম নামে একজন ফেসবুকে লিখেন, এরা দুটা বছর করেছে কী? মহামারীপরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা নীতি নৈতিকতা থেকে শুরু করে শ্রদ্ধা এবং পাঠে এমন উদাসীন হয়ে গেছে।

রামিজ উদ্দিন কানন নামে একজন লিখেন, যারা টেবিলে থাকার কথা, তারা আজ আন্দোলনের নামে নিজেদের সময় নষ্ট করছে। এসব ছেলেরা পড়াশোনা করে না। অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে সময় চলে যায়। আজ নানার বাড়ি যাওয়ার মতো আবদার করছে। এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ইসনান তৌসিফ নামে একজন লিখেন, অযৌক্তিক ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মুস্তফা কামরুল আখতারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পরীক্ষা পেছানো আমাদের হাতে নেই। এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে মন্ত্রণালয় । কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটক লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে। পরে তারা স্মারকলিপি দিয়েছে। এই স্মারকলিপি উর্ধ্বর্তনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এ আন্দোলনের সাথে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউ নেই৷ আমি মনে করি এসব অযৌক্তিক আন্দোলন থেকে সরে এসে তাদের পড়ার টেবিলে বসা উচিত এবং পড়াশোনা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করা উচিত।

এদিকে রাজধানী ঢাকাতেও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দুমাস পেছানোসহ চারদফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে কয়েকজনকে আটক করে।

এআইটি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!