বিধিনিষেধকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে গরুর ফ্যাশন শো চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো হলো গরুর (ষাঁড়) ফ্যাশন শো! সেই আয়োজনের ভিড়ে উড়ে গেছে সরকারের বিধিনিষেধ। হাজার হাজার দর্শনার্থীতে ধুলোয় ঢেকে যায় নগরের আউটার স্টেডিয়ামসহ আশপাশের এলাকা। দিনদুপুরেই হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকার!

স্টল থেকে গরুগুলোকে ফ্যাশন শোতে নিয়ে যাওয়ার সময় আরও ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে ধুলোবালি। এ সময় বিশাল আকৃতির গরুগুলোও ক্ষেপে যায়। যেকোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনা।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী কাজির দেউরি আউটার স্টেডিয়ামে ক্যাটেল এক্সপো-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। ফার্মাস কমিউনিটি ও ইউনিট্রেড ইভেন্টস এ আয়োজন করে।

প্রদর্শনীতে ৩২টি এগ্রো ফার্মের ১০০টি ষাঁড় প্রদর্শিত হয়। উদ্যোক্তা সৃষ্টির এ আয়োজনে অবশ্য আগন্তুকদের ফিরতে হয়েছে ধুলোমাখা শরীর নিয়ে। অনেকের নাকে-মুুখে ধুলো ঢুকে পড়তে হয়েছে কঠিন অবস্থায়।

স্টল ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ক্যাটেল এক্সপো-২০২২ মেলায় প্রাকৃতিকভাবে প্রতিপালন করা ৩২টি এগ্রো ফার্মের ১০০টি গরু প্রদর্শিত হয়। এতে সরকারি বিধিনিষেধ মানতে দেখা যায়নি। মানুষের ভিড় আর ধুলাবালিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে কাজির দেউরি আউটার স্টেডিয়াম। মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে বিগড়ে যায় বিশাল আকৃতির গরুগুলো। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন: কর্ণফুলী—আনোয়ারা সড়ক : উন্নয়নের উৎসবে ধুলোর যন্ত্রণা

এই ক্যাটেল এক্সপোতে স্টল দেয়—চৌধুরী এগ্রো ফার্মস, গোতাইল এগ্রো ফার্ম, নাহার ক্যাটল ফার্ম, বিসমিল্লাহ এগ্রো, সারা এগ্রো ফার্ম, এএনএফএল এগ্রো ফার্ম, এশিয়ান এগ্রো, খাঁন এগ্রো, এন এস এগ্রো, ওজি ডেইরি এন্ড এগ্রো, এসএনএম এগ্রো, ইকবাল এগ্রো, আরবি’স এগ্রো ফার্ম, এনবি এগ্রো, এইচএম এগ্রো, শাহ মজিদিয়া এগ্রো, গ্রীন হারভেষ্ট এগ্রো, শাহ আমানত এগ্রো, ব্রাদাস এগ্রো, কেজিএন এগ্রো, রুস্তম এগ্রো, ইউনিছেম এগ্রো, আলিম এগ্রো, ইন শা আল্লাহ এগ্রো, এসএআরএম এগ্রো, রয়েল র্যাঞ্চ এগ্রো, চাটগাঁইয়া এগ্রো, মাশাআল্লাহ এগ্রো, হোসাইন এগ্রো, মাহির এগ্রো ও সাঙ্গু ফার্ম এন্ড এগ্রো লিমিটেড।

এবারের ক্যাটেল এক্সপো মেলায় আসা সবচেয়ে বড় ষাড়টি ছিল নাহার এগ্রো ফার্মের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি। ৩২ মাস বসয়ী ষাঁড়টির ওজন ছিল ১ হাজার ৭৫ কেজি। এই ষাঁড়টি একপলক দেখতে স্টলের সামন ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। এতদিন মানুষের ফ্যাশন শো হয়ে এলেও এবার গরুর ফ্যাশেন শো দেখল মানুষ। ক্যাটেল এক্সপোকে অংশ নেওয়া গরুগুলো একে একে জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তিনি বলেন, ভাষার মাসে আমি প্রথমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ক্যাটেল এক্সপো ফ্যাশেন শো আয়োজন করা হয়েছে। এই ক্যাটেল এক্সপোর মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত তরুণ যুবকরা খামার করতে উৎসাহিত হবে। যার ফলে বিদেশ থেকে গরু আমদানি করতে হবে না। দেশে উৎপাদিত খামার থেকে মাংসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষিত তরুণদের বলব, তোমরা সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ার উদ্যোগ নিতে পারবে। এতে বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং মাংসজাত খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

মেলায় ঘুরতে আসা সাদিয়া ইসলাম লিজা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম ক্যাটেল এক্সপো মেলার খবর শুনে দেখতে চলে আসছি। কিন্তু আসার পর ধুলাবালির প্রকোপে পড়ে যায়। এতো সুন্দর একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করনেনি। যেকোনো মুহূর্তে ষাঁড়গুলো মানুষের ওপর আক্রমণ করতে পারতো। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো।

গরু

তিনি আরও বলেন, এছাড়া সরকারি বিধিনিষেধও মানছেন না কেউ। মানুষের গাদাগাদিতে করোনার প্রকোপ বাড়ারও সম্ভবনা রয়েছে।

তবে এমন আয়োজনকে অনেকে সাধুবাদ জানান। তারা বলেন, অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ এটি দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ পাবে। সরকারি চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদ্যোক্তা হলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি দেশের মাংসজাত খাদ্যের অভাব পূরণ হবে। তাহলে বিদেশ থেকে গরু আমদানি করতে হবে না। দেশের খামারে উৎপাদিত গরু থেকে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

নাহার এগ্রো ফার্মের মালিক নকিব রহমান টুটুল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দিনব্যাপী আয়োজিত ক্যাটেল এক্সপো মেলায় আমরা দুটি ষাঁড় নিয়ে এসেছি। আজকের মেলায় সবচেয়ে বড় ষাঁড়টি আমাদের নাহার এগ্রো ফার্মের। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়। ষাঁড়টির বয়স এখন ৩২ মাস। ওজন ১ হাজার ৭৫ কেজি।

আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুঝুঁকি’—মোটাতাজার ওষুধে বদলে যাচ্ছে গরু, চিনবেন যেভাবে

তিনি আরও বলেন, মেলায় অংশগ্রহণের একটিই উদ্দেশ্য। আমাদের ষাঁড়গুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত তরুণরা যেন খামার করতে আগ্রহী হয়। তরুণরা আগ্রহী হলে বেকার সমস্যা সমাধান হবে। আর মাংসজাত খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। আজকে দেখেন মাংসের ঘাটতি পূরণ করতে বিদেশ থেকে আমাদের ষাঁড় আমদানি করতে হচ্ছে। যার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। যদি দেশে উদ্যোক্তা বাড়ানো যায় তাহলে দেশের টাকা দেশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুস সবুর লিটন, এসিআই এগ্রিবিজনেজের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্রিডার ফার্মার্স অ্যাশোসিয়েশন সভাপতি মো. রাকিবুর রহমান টুটুল, চ্যানেল আই পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, কৃষি ও বিপণন বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ডা.রায়হান ফারুক।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!