খালাস পেয়েও ধরা খেল কমোডর রাব্বানীর খুনি ‘বিলাই সাইফুল’

বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলার সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত কমোডর গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামি সাইফুল ইসলাম প্রকাশ বিলাই সাইফুলকে পুনর্বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন।

দণ্ডিত মো. সাইফুল প্রকাশ বিলাই সাইফুল প্রথম দফা বিচারে খালাস পেয়েছিলেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাড. অশোক কুমার দাশ বলেন, ২০০৫ সালে মামলার রায়ে সাইফুল ইসলামকে খালাস দেন আদালত। পরে রায়ের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আপিল করলে হাইকোর্ট আপিল আদেশে বলেছিলেন, আসামি সাইফুলের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছিল। সাইফুলের বিষয়ে নতুন করে রায় দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশের পর দুজন সাক্ষীকে পুনরায় তলব করে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আদালত আসামি সাইফুলের উপস্থিতিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেন। পরে তাকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন : জমির বিরোধে খুন—৪ জন খালাস পেলেও ফেঁসে গেল ৩ জন

মামলার সূত্রে জানা যায়, নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম রাব্বানী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল নগরের পাঁচলাইশে গুলিবিদ্ধ হন। ১৩ দিন পর ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ এপ্রিল তিনি মারা যান। সেসময় তিনি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার একেএম এমতাজুল ইসলাম এজাহার দায়ের করেন। একই বছরের ২৮ আগস্ট সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেম।

এরপর মামলার রায়ে ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মো. সেলিম, মো. হাশেম ও আব্দুল মালেক সোহেল নামের তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অন্য দুআসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে ৫ বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া মানসুর আলম ও সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুলকে খালাস দেওয়া হয়।

এদিকে আপিল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলার আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ হত্যা মামলায় দুআসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরকে ‘কম সাজা’ দেওয়া হলেও বিচারিক আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেনি। হাইকোর্ট আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া তিন আসামির মধ্যে মো. হাশেম ও সোহেল হাইকোর্টে খালাস পান। তবে সেলিমের যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকে। অপরদিকে খালাস পাওয়া আসামি সাইফুলের নতুন রায় দিতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের আদেশের পর চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেছিল দুআসামি কেইপিজেড সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সেলিম।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!