‘কারখানার অক্সিজেন’ যাচ্ছে রোগীর শরীরে—ম্যাজিস্ট্রেট চালালেন অভিযান

জরিমানা গুনল এবি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জিলানী অক্সিজেন

করোনার এই দুঃসময়ে হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আনোয়ারার এক শিল্পকারখানা প্রতিদিন আয় করছে বড় অঙ্কের টাকা।

উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের সিডিএটেক এলাকায় রয়েছে এবি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের জিলানী অক্সিজেন কারখানা। এখানে প্রতিদিন রিফিল করা হয় করোনা রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার। সেই সঙ্গে পুরাতন সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করে কম মূল্যে বাজারে ছাড়ছে তারা। অথচ শিল্পকারখানার অক্সিজেন দিয়ে করোনা রোগীর সেবা দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর!

তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি শিল্পকারখানাটি। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা সুলতানার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায় কারখানায়। এ সময় তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সঙ্গে রিফিলের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে আনা ১২১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার জব্দ করা হয়।

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ মেহেদী ইসলাম খাঁনসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও থানা পুলিশের সদস্যরা।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজন উচ্চচাপসমৃদ্ধ অক্সিজেন। কিন্তু এখন শিল্পকারখানার সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা রোগীর জন্য। এই সিলিন্ডারে অক্সিজেনের পরিমাণ কত আছে, তা জানার সুযোগ নেই। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: এবার গ্রামেও অক্সিজেন সেবা চালু করলো কেএসআরএম

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো। এ অবস্থায় যেসব রোগীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো তাদের বাড়িতে থেকেই নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন চিকিৎসকরা। এসব রোগীদের অনেকে অন্তত একটি সিলিন্ডার রাখতে চাইছেন বাড়িতে। আর এই সুযোগে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্যসহ নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করে আসছিল একটি অসাধু চক্র। হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিনামূল্যে যে অক্সিজেনসেবা দিচ্ছেন সেই অক্সিজেনের যোগানও আসছে এই ধরনের কারখানা থেকে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার করে সরবরাহ করা হচ্ছে অক্সিজেন। এতে রোগীর শরীরে অক্সিজেন প্রয়োগে ঘটছে বিষক্রিয়া। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়ে শিল্পকারখানার পরিচালক আহমদ নিলয় বলেন, আমাদের কারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন নগরের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নেতাকর্মীরা রোগীদের জন্য রিফিল করে নিয়ে যাচ্ছেন। করোনা মহামারীতে দেশে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেলে আমাদের কাছ থেকে অক্সিজেন নেওয়া শুরু করে অনেকে।

কারখানাটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের জন্য আসেন শাহমীরপুর এলাকার একটি ফার্মেসির মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেনসেবা প্রদান করছি। সিলিন্ডারের বোতল খালি হলে এখানে এসে প্রতি বোতল ২০০ টাকা করে রিফিল করে নিয়ে যায়। এ পর্যন্ত ৫০-৬০টি সিলিন্ডার রিফিল করে নিয়ে গেছি। আমরাতো জানি না এটা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন। জানলে কোনদিনও নিতাম না। রিফিলের জন্য এসে দেখি এখানে অভিযান চলছে। তাই খালি বোতল নিয়ে চলে যাচ্ছি। মানুষের জীবন বাঁচাতে না পারলেও মেরে ফেলার অধিকারতো কারো নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরের বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, একজন রোগীর প্রতিমিনিটে কতটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন, তা কেবল একজন চিকিৎসকই বলতে পারেন। রোগীদের জন্য শিল্পকারখানার অক্সিজেন ঝুঁকিপূর্ণ। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে দেখা দিচ্ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমন নিম্নমানের অক্সিজেন ব্যবহারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতো রোগও হতে পারে।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা বলেন, করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে লাভের আশায় শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত অক্সিজেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও বোতল রিফিলের ল্যাব না থাকায় জিলানী অক্সিজেন নামের প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পুরাতন ছোট-বড় ১২১টি সিলিন্ডারও জব্দ করা হয়।

এ অক্সিজেন মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান ইউএনও।

ইমরান/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!