৭ বছরই চট্টগ্রামে, ওসি নন—এএসআই, লোকে চেনেন ওসি মর্জিনা নামেই

নাম তাঁর মর্জিনা আক্তার। চট্টগ্রামে সিটিএসবির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তিনি। এক-দুবছর নয়, টানা ৭ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করছেন একই স্থানে। মাঝেমধ্যে তাঁর বদলির আদেশ এলেও তা ক্ষণিকের! উপর মহলের আশীর্বাদে আগের কর্মস্থলে ফিরে আসেন তিন-চার মাসের মধ্যেই।

অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর একই জায়গায় থাকার পূর্ণ ফায়দা লুটছেন এএসআই মর্জিনা। দীর্ঘ সময় একই স্থানে থেকে শক্তিশালী এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। পাসপোর্ট ভেরিকিফেশনের নামে হয়রানি, হুমকি ও ভয় দেখিয়ে তিনি আদায় করেন টাকা। নামে-বেনামে একাধিক বাড়ি এবং প্লটও রয়েছে তাঁর।

পুলিশ সূত্র জানায়, একজন পুলিশের এক জায়গায় থাকার স্থায়িত্বকাল সর্বনিম্ন দেড় বছর থেকে সর্বোচ্চ দুবছর। অথচ এএসআই মর্জিনা টানা ৭ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন আকবরশাহ এলাকায়। ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট আকবরশাহ থেকে পাঁচলাইশ বদলি করা হয় তাঁকে। কিন্তু তিন মাস পরই পুনরায় সেই আকবরশাহ সিটিএসবিতে ফিরে আসেন তিনি।

পাসপোর্টের তথ্য যাচাইয়ে হয়রানি

স্ত্রী-কন্যার পাসপোর্টের জন্য মনসুরাবাদের পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন নগরের আকবরশাহ এলাকার সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এসএম আরিফ ডালিম। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পাসপোর্টের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ভেরিকিফেশন আসে নগরের আকবরশাহ এলাকার সিটিএসবির এএসআই মর্জিনা আক্তারের কাছে। পরে তথ্য নিয়ে জটিলতা বের করেন তিনি। এরপর শুরু হয় হয়রানি। হুমকি দিয়ে আদায় করে নেন নগদ ৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন : ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সবাই ‘রাজা’—বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে যানজট প্রতিদিন

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এসএম আরিফ ডালিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের পাসপোর্টে কোনো সমস্যা না থাকার পরও ভুল রিপোর্ট দেওয়ার ভয় দেখান এএসআই মর্জিনা আক্তার। হয়রানি থেকে বাঁচতে তিনটি পাসপোর্টের জন্য তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়।

নামে-বেনামে বাড়ি—প্লট মর্জিনার

আকবরশাহ থানার ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী বিশ্বাসপাড়া আমানত উল্লাহ শাহপাড়া বড় পুকুর পাড়ে তিন কাঠা জায়গার উপর ‘স্বপ্নবিলা’ নামে একটি বাড়ি আছে মর্জিনার। বাড়িটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। এলাকার সবার কাছে বাড়িটি ‘ওসি মর্জিনার বাড়ি’ নামে পরিচিত।

এছাড়া আকবরশাহ থানার ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীর লেকসিটি ফার্ম থেকে উত্তর দিকে ২০০ গজ উত্তরে ১৭৯ দাগে তিন কাঠা জায়গার মালিক মর্জিনা ও তাঁর স্বামী।

প্রশ্ন উঠেছে, ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে বাড়ি-প্লট কেনা এবং বেতনেরও বেশি টাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা কীভাবে সম্ভব?

মর্জিনার অস্বীকার

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করে এএসআই মর্জিনা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি যদি পাসপোর্টের নামে টাকা নিয়েও থাকি তা অনেক আগের। এখন কেন এসব কথা উঠছে। আর বাড়ি ও জায়গা সবকিছু আমার স্বামীর নামে।

কিন্তু পুলিশের চাকরি নীতিমালার কথা জানাতেই তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন।

সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি পি আরবি ১৯৪৩ এর ১২ ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে, পুলিশ সদস্য আইজিপি মহোদয়ের অনুমতি ছাড়া নিজ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় নিজ নামে বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের নামে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবে না। কিন্তু এএসআই মর্জিনা সরকারি চাকরির আচরণবিধি লঙ্ঘণ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, একই স্থানে টানা ৭ বছর থাকা মানে মর্জিনার হাত অনেক লম্বা। তিনি কমিশনারের আদেশও মানেন না। উপর মহলের সুনজর থাকায় এক স্থানে এত বছর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

কে কী বললেন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের এসবির সিটি ইন্টিলিজেন্ট অফিসার( সি আই ও ওয়ান) মঈনুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে সিটিএসবির উপপুলিশ কমিশনার ডা. মনজুর মোর্শেদ বলেন, পাসপোর্ট ভেরিকিফিশনের নামে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। এছাড়া কোনো পুলিশ সদস্য বর্তমান কর্মস্থলে থেকে নিজ নামে কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যের নামে জায়গা বা বাড়ি ক্রয় করতে পারবে না। এএসআই মর্জিনার বিষয়ে উঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!