ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সবাই ‘রাজা’—বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে যানজট প্রতিদিন

বাকলিয়া এক্সেস রোড নামে পরিচিত জানে আলম দোভাষ সড়কের প্রবেশমুখে (চন্দনপুরা-সিরাজউদ্দৌলা রোডের অংশে) প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে গাড়িচালক ও যাত্রীদের। তবে যানজট নিরসনে তেমন কোনো তৎপরতা নেই ট্রাফিক পুলিশের।

সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার (১১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে (চন্দনপুরা অংশে) তৈরি হওয়া যানজট গিয়ে ঠেকেছে গুলএজার বেগম স্কুল পর্যন্ত। এসময় থেমে থেমে চলে বিভিন্ন গাড়ি। এছাড়া রাস্তার অপর পাশেও ছিল অভিন্ন চিত্র।

এছাড়া শাহ আমানত সংযোগ সড়ক হয়ে আসা গাড়িগুলো নির্দিষ্ট দিকে না গিয়ে গাড়ি প্রবেশের রাস্তারে দিকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে যার মতো। ফলে প্রবেশ ও বের হওয়ার গাড়ি একসঙ্গে আটক পড়ছে এক স্থানে। এছাড়া রাস্তার দুপাশে রয়েছে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার স্ট্যান্ড এবং বিভিন্ন ভাসমান দোকান ও ভ্যানগাড়ি। ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গাড়ি প্রবেশ ও বের হতে পথে পেতে হচ্ছে বেগ। তৈরি হচ্ছে যানজট।

স্থানীয়রা জানায়, এক কিংবা দুদিন নয়। প্রতিদিনই বাকলিয়া এক্সেস রোডের প্রবেশমুখে গাড়ি জটলা বেধে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, বাকলিয়া এক্সেস রোড যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করলেও প্রবেশমুখে ট্রাফিক না থাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট থাকে। এই মোড়ে অন্তত দুজন স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ট্রাফিক পুলিশের ৯ ইন্সপেক্টরকে হঠাৎ বদলি

যাত্রীরা জানান, যানজটের কারণে প্রতিদিন গাড়ি সংকট তৈরি হচ্ছে। অনেক গণপরিবহন নির্দিষ্ট গন্তব্য পর্যন্ত যেতে চাই না। গাড়ি ঘুরিয়ে পুনরায় একই পথে চলে যায়। আবার অনেক চালক যানজটের অজুহাতে ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে দিতেও হয়।

এ বিষয়ে টেম্পু চালক (আমতল-কাপ্তাই রাস্তার মাথা) মো. খোকন বলেন, প্রতিদিন যানজট তৈরি হচ্ছে বাকলিয়া এক্সেস রোডের মুখে। সেটা সকাল হোক, কিংবা রাত। দেখার যেন কেউ নেই। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় সকাল ও সন্ধ্যায়। এসময় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ খুব প্রয়োজন।

বাস চালক শাহীন বলেন, যে যার মতো করে গাড়ি চালায়। মোড়ে ট্রাফিক না থাকায় কেউ আইন মানতে চাই না। কার আগে কে যাবে এ প্রতিযোগিতা চলছে। গাড়ি প্রবেশ ও বাইরের মুখে অবৈধ ব্যাটারি রিকশার স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। ফলে যানজট প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

টেম্পু যাত্রী মো. সোহেল বলেন, সকাল ও সন্ধ্যায় যানজট বেশি হয়। নেই ট্রাফিক পুলিশও। ফলে যানজটে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টা ধরে। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি বাড়ে দুর্ভোগও। রমজানে দুর্ভোগ হয়ত আরও বাড়বে।

চাকরিজীবি রেহেনা আক্তার বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এবং ফেরার পথে বাকলিয়া এক্সের রোডের মুখে যানজটে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। একজন হলেও ট্রাফিক পুলিশ থাকলে গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা থাকত। রমজানে কী হবে কে জানে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বিপ্লব কুমার পাল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিদিনই কাজ করছি। বাকলিয়া এক্সেস রোডের যানজটের অভিযোগ পাচ্ছি। তবে লোকবল সংকটের কারণে স্থায়ীভাবে কিছু করতে পারছি না। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া যায় কিনা সেটি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করব। আর ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে।

তিনি আরও বলেন, রোজা চলে এসেছে। মানুষ যাতে ইফতারের আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই প্রশাসন-দক্ষিণ) মো. রফিকুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত দুএকদিন প্রায় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে যানজট ছিল। যানজট নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সবদিকেই যানজট নিরসনে নিয়মিত কাজ করতে হয়। বাকলিয়া এক্সেস রোডের দিকে নিয়মিত নজর রাখতে বলব আপাতত আমাদের মোবাইলকে টিমকে। তবে স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশের দেওয়ার বিষয়টি এখনও বলতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জানে আলম দোভাষ নামে এ সড়কটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণের প্রকল্প নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ এবং দশতলা ভবনের জটিলতায় প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যয় বেড়ে হয় ২১৭ কোটি টাকা।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!