‘ওসির কাণ্ড’—বর্বর নির্যাতনের দাগেও মন গলেনি, ‘ভয়’ দেখিয়ে সাজানো স্বীকারোক্তি

জামিনে বের হওয়া সৈয়দ মোস্তাকিমকে এবার আটক রেখে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাতে মোবাইল ফেরতের জন্য থানায় গেলে তাঁকে ওসির রুমে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।

এর আগে রোববার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার মোস্তাকিম। এদিন দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন শুনানিতে অংশ নেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের জিয়া হাবিব আহসানসহ মানবাধিকার কমিশনের শতাধিক আইনজীবী।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সৈয়দ মোস্তাকিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জামিনে মুক্তি পেয়ে রোববার রাতে আমি মোবাইল আনতে পাঁচলাইশ থানায় যাই। এরপর আমাকে ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। কথিত একটি অনলাইন টিভির ক্যামেরায় সব রেকর্ড করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোস্তাকিমের আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মোস্তাকিমকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। নির্যাতনের অভিযোগ থেকে বাঁচতে এটি পুলিশের একটি অপকৌশল। তবে তারা রেহাই পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।

এদিকে গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদের আন্দেলনে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের ‘অতি উৎসাহী’ কোনো ভূমিকা ছিল কিনা তা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন সিএমপির কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। গত ১৪ জানুয়ারি এ কমিটি গঠন করা হয়।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মাহতাব উদ্দিনকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর দুসদস্য হলেন- অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আলী হোসেন ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সিএসবি) আব্দুল খালেক। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) স্পিনা রাণী প্রমাণিক।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কিডনি রোগীর ছেলে মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার এবং একজন নারী কিডনি রোগীকে ওসির লাথি মারা নিয়ে ক্ষুদ্ধ স্বয়ং সিএমপির কমিশনারও। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের ‘অতি উৎসাহী’ কোনো ভূমিকা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে চমেক হাসপাতালে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছিলেন রোগী ও স্বজনরা। তখন পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এসময় আন্দোলনরত এক নারী কিডনি রোগীকে লাথি মারেন পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার। তখন আন্দোলনকারীরা আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সৈয়দ মোস্তাকিমকে আটক করে পুলিশ। তাকেসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর স্বজনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

এদিকে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন করেছে বলে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন মোস্তাকিম। তিনি দাবি করেন, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার দুপায়ের উরুর নিচে বিভিন্ন জায়গায় কালো ও লাল দাগ হয়ে গেছে। এসময় মোস্তাকিমের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানান আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান।

এ ব্যাপারে কথা বলতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!