আনোয়ারায় বোরো চাষে মাথায় হাত

একখানি জমিন চাষ করতে ১২ হাজার টাকা খরচ। কী ধান কাটবো সব ধান তো লবণের পানি আর গুনগুনিতে (ব্লাস্ট রোগে) নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো কোনো ধান নয়, কতগুলো ঘাস। মুখে কোনো শব্দ নেই বাপ, কী করব এমনে কাটতেছি আরকি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী। কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি ধানের মাঠেই বসে পড়েন।

প্রতিবারের মতো এবারও তিনটি জমিতে ধান চাষ করেছেন আইয়ুব আলী। এর মধ্যে একটিতে ব্রি২৮, আরেকটিতে ৯২ এবং অন্যটিতে দেশি ধান। এগুলো আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বাম্পার ফলনের আশা থাকলেও লবণাক্ত পানি আর ব্লাস্ট রোগে তার তিনটি জমিই পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।

আইয়ুব আলীর মতোই করুণ দশা অন্যান্য কৃষকের। তারা জানান, বৈশাখের এ সময়ে আনোয়ারায় পুরোদমে চলে বোরো মাড়াইয়ের কাজ। বোরোর বাম্পার ফলনে মাঠজুড়ে সোনালি ধানে ঝিকঝিক করার কথা থাকলেও এবার বোরোর ফলনে হতাশ আনোয়ারার ১২ হাজার কৃষক। গেল কয়েক বছর ধরে আনোয়ারায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে এবার বোরোর ফলনে মাথায় হাত এখানকার কৃষকদের।

কৃষক ও বিভিন্ন ব্লগে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার উপজেলার ৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর আবাদ হওয়া বোরো লবণের পানিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর এসব ফসল একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে ’নেক ব্লাস্ট’ নামে এক রোগ। এ রোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। নেক ব্লাস্টের জন্য শুকিয়ে চিট হয়ে গেছে ধানের শিষ। বিশেষ করে নাম্বারি ধানগুলোতে দেখা দিয়েছে এ রোগ।

এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা এর সঠিক সমাধান দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক কৃষক।

আনোয়ারা কৃষি সম্প্রাসারণ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিবারের মতো এবারও বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বোরো রোপণের কিছুদিন পর খালে আসে লবণাক্ত পানি। মাঝখানে বৃষ্টি হলে লবণের ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও ধান বের হওয়ার পর ছত্রাকজাতীয় নেক ব্লাস্ট রোগে খেতের অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

আনোয়ারায় এ ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান এবং ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে উফশী ধান চাষ করা হয়। হাইব্রিড হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৭ মেট্রিক টন এবং উফশী ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে চলতি বোরো মৌসমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৫৩২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন

কৃষিবিদরা জানান, কর্ণফুলী নদীর পানির মাধ্যমে এই দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ হয়। কিন্তু এবার বোরো রোপণের পর থেকে দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় কর্ণফুলী নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো। লবণাক্ত পানির কারণে ফসলে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে এবং সেচের এই লবণাক্ত পানিতে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

বারখাইন এলাকার কৃষক সিরাজ বলেন, ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছি ছয় একর জমিতে। লবণের পানিতে এমনিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, তার মধ্যে গত এক সপ্তাহে নেক ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে দুই একর ফসল।

বিলপুর এলাকার কৃষক ইসমাঈল এবার বোরো চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। মাঝখানের বৃষ্টি লবণের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে মনে হলেও তা হয়নি। এখন ধান বলতে কিছুই নেই।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনোয়ারা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘসময় বৃষ্টি না হওয়াটা ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি লবণাক্ত পানি বের করে দিয়ে মিঠা পানি ঢুকাতে। তবে এবার পুরো কর্ণফুলীর পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এখানে করার কিছুই ছিল না। লবণের কারণে এমনিতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এর মাঝে তাপদাহের কারণে বিভিন্ন রোগবালাই হয়েছে। যার ফলে এবার বোরোতে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!