‘জবরদখল’—অন্যের দোকান দখল করে ভাড়া নিচ্ছেন সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেট সমিতির সভাপতি

জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের একাংশের অসুস্থ মালিককে অনুরোধ করেছিলেন কিছুদিনের জন্য তাঁর গুদামটি ব্যবহারের। সরল বিশ্বাসে তিনি সেই অনুরোধ রেখেছিলেন। কিন্তু এই অনুরোধ রাখাটাই কাল হয়ে গেল জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের একাংশের স্বত্বাধিকারী মো. পানাউল্লাহ চৌধুরীর!

পানাউল্লাহ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে এপেক্স কোম্পানির সঙ্গে করা হলো অবৈধ চুক্তি। আর এই অবৈধ চুক্তি দিয়েই মালিক না হয়েও তিনি ভাড়া দিয়ে দেন ওই গুদামটি। শুধু তাই নয়, গত তিন বছর ধরে মাসে ১৯ হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়েও নিয়েছেন!

জোরপূর্বক এভাবে গুদাম দখল করে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ খোদ জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় তলায় পানাউল্লার অফিসটিও জোর করে দখল রেখেছেন মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের একাংশের স্বত্বাধিকারী মো. পানাউল্লাহ চৌধুরী। মার্কেটের তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় ৫০০ ফুট ও ৩০০ ফুটের দুটি দোকান রয়েছে তাঁর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় তলার দোকানটি নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর পঞ্চম তলার দোকানটি গুদাম হিসেবে ভাড়া দিতেন।

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি অফিসে আসতে পারেননি। ওই সময়ের মধ্যে সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী পঞ্চম তলার গুদামটি কিছুদিনের জন্য ব্যবহারের অনুরোধ করেন। পানাউল্লাহ চৌধুরীও সভাপতির অনুরোধে তা ব্যবহার করতে দেন।

আরও পড়ুন: সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে মামলা খেল সিবিজির সভাপতি—সম্পাদকসহ ৪ নেতা

এদিকে মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী দোকানের স্বত্বাধিকারী পানাউল্লাহ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে গুদামটি ভাড়া লাগিয়ে দেন। মাসিক ১৯ হাজার টাকা ভাড়ায় এপেক্স কোম্পানিকে গুদাম হিসেবে ভাড়া দেন তিনি। এভাবে গত তিন বছরে তিনি প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয়ও করেছেন। শুধু তাই নয়, গত তিন বছর অসুস্থতার কারণে পানাউল্লাহ চৌধুরী অফিসে না আসার সুযোগকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী। তিনি জোরপূর্বক পানাউল্লাহ চৌধুরীর তৃতীয় তলার অফিসটিও দখলে নিয়েছেন! এখন সেই অফিসটি নিজের অফিস হিসেবেই ব্যবহার করছেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, এই অফিসে বসেই তিনি পরিচালনা করেন অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পানাউল্লাহ চৌধুরীর ছেলে এরশাদ উল্লাহ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমার বাবা এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের একাংশের একক স্বত্বাধিকারী। আমাদের তৃতীয় তলায় ৩০০ ফুটের একটি দোকান আর পঞ্চম তলায় ৫০০ ফুটের একটি গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় তলার দোকানটি আমার বাবা ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর পঞ্চম তলার গুদামটি ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়। হঠাৎ আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অফিসে যেতে পারেনি। ওই সময়ে সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী আমার বাবার কাছ থেকে পঞ্চম তলার গুদামটি কিছুদিনের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া তাঁকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোস্তাক পঞ্চম তলার গুদামটি সেন্ট্রাল প্লাজার দোকানদার, দোকানের ম্যানেজার ও ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগসাজশে বাবার স্বাক্ষর জাল করেন। এরপর অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে মাসিক ১৯ হাজার টাকায় এপেক্স কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে দেন। অপরদিকে তৃতীয় তলার দোকানটিও তিনি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে তাঁর অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন পর বাবা সুস্থ হয়ে সেখানে যান। এ সময় বাবা তার এমন কর্মকাণ্ড দেখে জানতে চাইলে মোস্তাক আহাম্মদ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো আমার ঘরের গেইটের সামনে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে এসে আড্ডা দিয়ে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখানোর চেষ্টা করছেন। পরে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত করে আমাদের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।

আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ কোটিপতি’—স্বর্ণ ব্যবসায়ী, আড়ালে চোরাই স্বর্ণ বাণিজ্যের ফাঁদ

এদিকে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দোকান মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, হ্যাঁ আমাদের সভাপতি স্বাক্ষর জাল করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে সভাপতি আমাদের কমিটির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন এ কাজের জন্য। এ ঘটনায় সভাপতি মোস্তাকের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

তবে সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে আলোকিত চট্টগ্রামের কাছে দাবি করেন সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী। তিনি বলেন, না না, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি, এগুলো মিথ্যা কথা। আর যার স্বাক্ষর জাল করার কথা বলা হচ্ছে সে আমার খুব কাছের আত্মীয়। ওদের সঙ্গে কথা বলে আমি সব ঠিক করে ফেলেছি, কোনো মামলা হয়নি।

এএইচ/এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!