‘বয়সের ছাড়’—চট্টগ্রামে অপরাধের মাঠে সমানে খেলছে শিশু

শুরুটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় ছোটখাটো চুরি দিয়ে। ধীরে ধীরে ছিনতাই, পকেটকাটা, প্রতারণায়ও জড়িয়ে পড়ে অনেকে। কেউ কেউ হয় খুন, ডাকাতি, অপহরণের ‘সোর্স’। এতকিছুর পরও তাদের অপরাধ প্রচারের আলোয় আসে কম। কারণ তারা যে শিশু! বয়স কমের ফায়দা লুটে অপরাধের মাঠে সমানে খেলছে শিশুরা!

কারা এই ‘শিশু অপরাধী’?

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশুর বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে সাধারণত সদ্যভূমিষ্ট থেকে আট-নয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশু এবং ১০ থেকে ১৫-১৬ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোর ধরা হয়। এরমধ্যে অপরাধে সম্পৃক্ত ছয় থেকে নয় বছর বয়সীদেরকেই মূলত ‘শিশু অপরাধী’ বলা হয়ে থাকে। যদিও এই বয়সসীমার মধ্যে কেউ অপরাধ করে থাকলে তাকে শাস্তি নয়, বরং সংশোধনের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের আইনে। চট্টগ্রামের পেশাদার অপরাধীরা আইনের এই ছাড়কেই বিশেষ সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন। নানা প্রলোভনে কমবয়সী শিশুদের জড়ানো হচ্ছে অপরাধে।

হাতেখড়ি চুরিতে

কখনও পেশাদার অপরাধীদের প্রলোভনে, কখনও অভিভাবকের ইচ্ছায় শিশুরা জড়াচ্ছে অপরাধে। আবার খেলার বশেও অনেক শিশু অপরাধ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাতেখড়ি হয় মূলত ছোটখাটো চুরি দিয়ে। এসব শিশুর ‘টার্গেট লিস্টে’ থাকে এলাকার অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বাড়ি ও বাড়ির আঙিনা এবং দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মোবাইল, ঘরোয়া সামগ্রী, দোকানের মালামাল এমনকি বাড়ির আঙিনার গাছের ফলও বাদ যায় না সেই ‘লিস্ট’ থেকে! এছাড়া পেশাদার চক্রের প্রশিক্ষিত শিশুরা হাত পাকায় বড় চুরিতেও।

কিছু চুরির ঘটনা এলাকায় স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়। কিছু গড়ায় থানা পর্যন্ত। চট্টগ্রামের থানাগুলোতে ‘শিশু চোর’দের নিয়ে জমা পড়েছে বেশকিছু অভিযোগ।

পকেটকাটা থেকে প্রতারণা, ‘হাতিয়ার’ বয়স

গণপরিবহনে মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে প্রতারণা-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও এখন জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারে শিশু ছিনতাই চক্রের দেখা মিলেছে। ফ্লাইওভারে ‘রশির ফাঁদ’ পাতা ‘শিশু ছিনতাইকারী’ হাতেনাতে ধরা পড়েছে একাধিকবার।

নগরে চলতিপথে মোবাইল ছিনিয়ে দৌড়ে পালানোর ঘটনা ঘটেছে অনেক। এছাড়া ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত কিছু শিশু লোক ঠকিয়ে যাচ্ছে নানা কৌশলে। এসব অপরাধীদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ‘বয়স’। ধরা পড়লে আইনে ফাঁকফোকর তো আছেই, তাৎক্ষণিক জনরোষ থেকেও রেহাই মেলে বয়সের কারণে।

অপরাধের ‘সোর্স’, চলে মাদকবিক্রিও!

নগরে খুন, ডাকাতি, অপহরণের মতো বড় অপরাধেও শিশুদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ মিলেছে। এসব ক্ষেত্রে শিশুরা মূলত তথ্য আদান-প্রদানে ‘সোর্স’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বয়সের কারণে মানুষের সন্দেহ কম হওয়ার কারণেই মূলত শিশুদের ‘সোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে পেশাদার অপরাধীরা। একই কারণে মাদক পরিবহন এবং বিক্রিতেও এখন কাজে লাগানো হচ্ছে শিশুদের।

এক ভুক্তভোগী বললেন…

নগরের ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া ফেরদৌসী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের এলাকায় শিশু অপরাধীদের ‍উৎপাত বেড়ে গেছে। দেয়াল বা গেট টপকে এসে বাড়ির আঙিনার গাছের ফল চুরি থেকে শুরু করে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্রও চুরি করে এসব শিশু। বারবার সতর্ক করার পরও থামছে না তাদের উৎপাত। বরং যত দিন যাচ্ছে এসব শিশুর অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

পুলিশ কী বলছে?

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, আপনি যে বয়সের শিশুদের কথা বললেন সে বয়সীদের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত অভিযুক্ত শিশুর অভিভাবককে ডাকি। সতর্ক করি। তারপরও কাজ না হলে ওই শিশুকে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শিশু অপরাধীদের বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দেশে যারা ‘পলিসিমেকার’ আছেন তারাই বিষয়টা দেখবেন। প্রচলিত আইনে যা আছে, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!