হাতি মেরে পুঁতে ফেলা হচ্ছে মাটিতে, কুম্ভকর্ণের ঘুমে বাঁশখালীর বন বিভাগ

বাঁশখালীতে বন্য হাতি মেরে পুঁতে ফেলা হচ্ছে মাটিতে। কিন্তু এর পরেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না বন বিভাগের।

উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল পুঁইছড়ি পাহাড়ে হাতি মেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনার ১১ দিন পর বিষয়টি জানতে পারে বন বিভাগ। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে থানায় দায়সারা জিডি করার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পুঁইছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল পুঁইছড়ি বান্দরমরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ১৭ দিন আগে মারা যাওয়া হাতিটি যেখানে মাটিচাপা দিয়েছিল সেখানেই ময়নাতদন্ত শেষে আবার মাটিচাপা দিয়ে উপরে গাছের ডালপালা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন : হাতি মেরে জেলে বাবা—ছেলে

বন বিভাগ জানায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসার আগে কোনো ব্যবস্থা ও মামলা করা যাবে না।

জানা গেছে, ৭ বছরে ১৯টি হাতি বাঁশখালীর বিভিন্ন পাহাড়ে মারা গেলেও একটিরও সঠিক তদন্ত হয়নি। কারো বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বন বিভাগ।

অভিযোগ আছে, নিরাপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চিহ্নিত অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেয় বন বিভাগ।

স্থানীয় কৃষক আলী নবী ও নেছার আহমেদ বলেন, হাতিটি অনেকদিন আগে কে বা কারা মেরে বান্দরমরা পাহাড়ের সমতল অংশে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়ে বসবাসরত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়। খবর পেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এসে হাতিটি মাটি থেকে উঠিয়ে ময়নাতদন্ত করে। এরপর আবার একই স্থানে মৃত হাতিটি মাটিচাপা দিয়ে গাছের বিশাল বিশাল ডালপালা দিয়ে ঢেকে রাখে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ওই পাহাড় এবং ফসলি জমির মৌরশী সূত্রে মালিক ফরহাদ মিয়া, ফারুক সিকদার, হানে আলম ও মঞ্জুর মিয়া। বিশাল এ সম্পত্তি স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর, দেলোয়ার, আজিমকে বর্গা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, জমির মালিক ফারুক সিকদার ও ফরহাদ মিয়া হাতি মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছেন। এ কারণে গত ২০ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্ত করা হলেও বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সোমবার ময়নাতদন্তের নমুনা কুমিল্লা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়নি। বিশাল হাতিটিকে ‘বাচ্চা হাতি’ উল্লেখ করে বন বিভাগ থানায় জিডি করেছে। এমনকি মৃত হাতিটি মাটি থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি এবং জায়গার মালিক কারা তাও উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. তানভীর হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ময়নাতদন্তের সময় হাতিটির পচা গন্ধ ছড়িয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ময়নাতদন্তের দিন থোে অন্তত ১১ থেকে ১২ দিন আগে হাতিটি মারা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণায় মনে হচ্ছে কেউ মেরে হাতিটিকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। এখনও ময়নাতদন্তের সুরতহাল প্রতিবেদন কুমিল্লায় পাঠানো হয়নি বলে জানান তিনি।

একই প্রসঙ্গে পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিট কর্মকর্তা মু. ফখরুল ইসলাম বলেন, থানায় জিডি করার পর হাতিটি কীভাবে মারা গেছে তা তদন্ত করছি।

জিডিতে মাটিতে পুঁতে রাখার বিষয়, স্থান ও ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ নেই কেন এ প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। তবে তিনি নানামুখী চাপে ভয়ে থাকার শঙ্কার কথা জানান।

যোগাযোগ করা হলে পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হাতি মৃত্যুর ঘটনাটি জোরালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। হাতি যদি কেউ হত্যা করে থাকে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বন বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ৯ বছরে বাঁশখালীর বনাঞ্চলে মারা গেছে ১৯টি হাতি। শুধু কালীপুর রেঞ্জে মারা গেছে ১২টি বন্য হাতি। জলদী ও পুঁইছড়ি রেঞ্জে মারা গেছে ৭টি হাতি। অসুস্থ হয়ে পড়া ৩টি হাতিকে সুস্থ করে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : এবার বাঁশখালীর ধানক্ষেতে পাওয়া গেল বন্য হাতি

সর্বশেষ গত ১১ জুন কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কালীপুরে গভীর জঙ্গলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মারা হয় একটি হাতি। এর আগেও জঙ্গল কালীপুরে মৃত হাতির শাবক পাওয়া যায়।

চার মাস আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নের লটমনি পাহাড়ে ১টি হাতিকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এর আগে ১২ নভেম্বর বাঁশখালীর চাম্বল বনবিট অফিসের অদূরে আরও একটি মৃত হাতি উদ্ধার করা হয়।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!