‘হাতির গ্রাম’ কর্ণফুলী—রাত হলেই রাজত্ব

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা এখন ‘হাতির গ্রামে’ পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাতির দল চষে বেড়ায় লোকালয়ে। খাবারের খোঁজে ভাঙচুর চালায় ঘরবাড়ি ও দোকানে।

এমন চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। দুর্গম বনাঞ্চলে খাবার না থাকার কারণে হাতির দল লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়।

দিনের বেলায় কেইপিজেডের জলাশয় ও বাগান এলাকায় থাকলেও রাতে হাতির দল রাজত্ব করে লোকালয়ে। খাবারের সন্ধানে বের হওয়া বন্য হাতির ভয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এলাকাবাসীর। প্রতিরাতে পালা করে দিতে হয় পাহারা।

আরও পড়ুন: আনোয়ারায় রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে বন্য হাতির দল

স্থানীয়রা জানান, গত পাঁচ বছরে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় ১৭ জনের প্রাণহানিসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সারছে, হাতি সরোনোর উদ্যোগ নিচ্ছে না। বরং ভাঙচুর ও ক্ষতি হলে তারা জিডি করতে বলেন ক্ষতিগ্রস্তদের। এটি নিয়েও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি।

জানা যায়, বাঁশখালীর পাহাড় থেকে আসা একটি হাতির দল পাঁচ বছর ধরে দেয়াং পাহাড়ে রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে হাতিগুলো সন্ধ্যা হলেই কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানের খিলপাড়া, খতিবপাড়া, মাইজপাড়া, বড়উঠান, দৌলতপুর, দক্ষিণ শাহমীরপুর এলাকাসহ আনোয়ারার বারশত ইউনিয়নের কবিরের দোকান, পশ্চিমচাল, কান্তিরহাট; বটতলী ইউনিয়নের জয়নগর, ছিরাবটতলী, গুচ্ছগ্রাম, জয়নালপাড়া; বৈরাগ ইউনিয়নের দেয়াং বাজার, উত্তর গুয়াপঞ্চক, মধ্যম গুয়াপঞ্চক, খাঁনবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বদলপুরা, বন্দর এবং বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও লোকালয়ে প্রবেশ করে বাড়িঘর ভাঙচুর চালিয়ে ফসল নষ্ট করে।

এছাড়া হাতির আতঙ্কে রয়েছে কেইপিজেডের বিদেশি নাগরিক এবং শ্রমিক-কর্মচারীরা। সন্ধ্যা নামলেই পুরো কেইপিজেডজুড়ে নেমে আসে হাতির ভয়। এখানে আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও আশপাশের এলাকার প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তাদের অনেকে পায়ে হেঁটে কারখানায় যাওয়া-আসা করে। তাই তাদের ভয়ও বেশি।

তবে এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ চলছে বলেও জানান বড়উঠানের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম।

তিনি বলেন, বন্য হাতিগুলোকে নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত আট পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় হাতির তাণ্ডবে বেশকিছু মানুষের ফসল ও ঘরের ক্ষতি হয়েছে। গত সোমবার এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বন বিভাগ।

আরও পড়ুন: ভেঙে ফেলেছে সীমানা প্রাচীর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে তাণ্ডব চালাচ্ছে একদল বন্য হাতি

দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় পটিয়া রেঞ্জ কর্ণফুলী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপূরণ দেয়।

এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে আলোচনা সভা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। পটিয়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা নুর আলম হাফিজের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবু তাহের। অতিথি ছিলেন জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম। সভায় বক্তারা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণি রক্ষার ওপর জোর দেন।

কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হাতির আক্রমণে কর্ণফুলীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি বন বিভাগ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!