হাইকোর্টে নথি তলব—সেই আলী আব্বাসের ৪৮ কোটি টাকা সুদ বাদ দিল কৃষি ব্যাংক

কৃষি ব্যাংক থেকে মেসার্স আব্বাস ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আলী আব্বাসের ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত নথি চার সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সুদ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৪ মে) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আব্বাস তার ৮৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে সুদ মওকুফ করতে ২০১৯ সালের ৩০ জুন আবেদন করেন। সুদ মওকুফের জন্য কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বিআরপিডি সার্কুলার-৫-এর আওতায় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়। সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ এবং স্থগিত সুদসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। অবশিষ্ট পাওনা ৩৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে পরিশোধের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এদিকে মাধ্যমে সুদ মওকুফের প্রমাণ পাওয়ায় একটি কমিটি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের প্রতিনিধি আছেন। অনিয়ম চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করার কথা রয়েছে।

গত ৫ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘অবৈধভাবে বিএনপি নেতার ৪৮ কোটি টাকা সুদ মাফ’ শিরোনামে প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমান। অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে। অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনে কৃষি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৭৪০তম সভায় অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার এবং স্থগিত সুদ ৪১ লাখ ৪২ হাজারের অর্ধেক ২০ লাখ ৭১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। এ সিদ্ধান্তের নথি তলব করেছেন এবং রুল জারি করেছেন আদালত

পত্রিকার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে কৃষি ব্যাংক থেকে ৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক বিএনপি নেতা। ব্যবসার জন্য নেওয়া ঋণটি পরিশোধ না করায় দুই বছর পর মামলা হয়েছিল অর্থঋণ আদালতে। ২০১৩ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন ঋণের টাকায় তার নিজের ও স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় মামলা করে। কিন্তু মামলা দুটি নিষ্পত্তি হওয়া আগেই কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের প্রায় ৪৮ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সুদ মওকুফের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চেইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসাইন বলেন, ব্যাংকের টাকা শোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু ঋণটি এরই মধ্যে পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

ঋণের সুদের প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আলী আব্বাস বলেন, ঋণ পুনঃতফসিল হওয়ার পর ইতোমধ্যে দুই কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শর্তানুযায়ী বাকি টাকাও শোধ করবো।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!