সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা : বিচারপতি আরিফ  

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা।

‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানী ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এ কর্মশালার আয়োজন করে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের এই বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে এই আইনটা সাংবাদিকবান্ধব আইন বা ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন–বান্ধব আইন। বারবার একটা কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়…। আগে মানহানির জন্য হুট করে জেলে দেওয়া যেত। এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বোদ্ধা ব্যক্তি যাঁরা, তাঁরাও বিভিন্ন আর্টিকেলে এ নিয়ে বারবার কথাগুলো বলে এসেছেন।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, আইনের পাঁচটি ধারা (২২, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৮) যেকোনোভাবে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। যদিও ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়ে জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কয়েকটা সেকশন খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে জার্নালিজমে।

আইনের ২২ ধারা তুলে ধরে তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি কাকে বলে? ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতির কোনো সংজ্ঞা কিন্তু এখানে নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি সংজ্ঞায়িত করেন জালিয়াতিটাকে— কোন কাজটা করলে আমার জালিয়াতি হবে, কোন কাজটা করলে জালিয়াতি হবে না? এখন যদি সংজ্ঞায়িত না করেন, তাহলে একেক সময় একেক সরকার আসবে একেক ভিউ নিয়ে। তথ্যমন্ত্রী হবেন একেক ভিউ নিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন, একেকজনের একেক ধরনের মাইন্ডসেট থাকে। কেউ সাংবাদিকবান্ধব হন, কেউ খুব বেশি সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।

আইনের ২৩ ধারায় ‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা’ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এই ধারাটি তুলে ধরে বিচারপতি আরিফ বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। অপরাধ হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড। ধারাটিতে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে— ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনো তথ্য পরিবর্তন করা, মুছে ফেলা, নতুন কোনো তথ্যের সংযুক্তি বা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে যার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা, তার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো সুবিধাপ্রাপ্তির বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা।

তিনি বলেন, এটাতে হয়তবা খুব বেশি সাংবাদিকদেরকে ধরতে পারবে না। কিন্তু ইনজেনারেল যারা মিডিয়া ব্যবহার করে, এখন মিডিয়া ব্যবহার করার সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ। এখন গরিব জনগোষ্ঠী যারা তাদের হাতেও মোবাইল ফোন আছে, ফেসবুক ব্যবহার করছে, ইউটিউব দেখছে ও আপলোড করছে। এটা ইন জেনারেল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ধারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম সভাপতি শামীমা আক্তার। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনায় অংশ নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!