সদরঘাট-মাঝিরঘাট সড়কও দখলে গেল ‘অবৈধ’ ওজন স্কেলের, ভয়াবহ যানজটে ট্রাফিক পুলিশের গলদঘর্ম

নগরের ব্যস্ততম সদরঘাট-মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড সড়কে তীব্র যানজট এখন প্রতিদিনের সঙ্গী। বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে সড়কে বসানো ওজন স্কেলগুলো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে স্কেল বসিয়ে যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।

এদিকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্মকর্তারা বলছেন, ওই সড়কে বসানো স্কেলেগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি স্কেলের অনুমোদন আছে। অবৈধ স্কেলগুলোর বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান চালানো হবে।

জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো সড়কটি। বর্তমানে যেটি সদরঘাট- মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে এখনো বিমানবন্দর-আগ্রাবাদ-কদমতলীর যাত্রী এবং মাঝিরঘাটের বাসিন্দারা চলাচল করেন।

এছাড়া কর্ণফুলী নদীপাড়ে রয়েছে ২২টি নৌঘাট, মাঝিরঘাটে ১০টি লবণ মিল এবং ব্যবসায়ীদের অর্ধশতাধিক মাছের কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে জাহাজ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য নামে। লোড-আনলোডের কাজ হয়। এ কাজে ব্যবহৃত শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি প্রতিদিন চলাচল করে ওই সড়কে।

বর্তমানে সড়কটিতে চলাচলে প্রধান বাধা অসহনীয় যানজট। সড়কে স্থাপিত ওজন স্কেলের কারণে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হয়। কখনো কখনো এই যানজট সদরঘাট ছাড়িয়ে বারেক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, সরু রাস্তার ওপর বসানো স্কেলগুলোই যানজটের মূল কারণ। সেখানে এআর কম্পিউটার স্কেলস, এআর পারফেক্ট স্কেলস, হাজী ইউছুফ স্কেল, মেসার্স শাহ জালাল এন্টারপ্রাইজ, আযান ডিজিটাল স্কেল, এমআই ট্রেডিং কম্পিউটার স্কেলসহ ১০টির বেশি ওজন মাপার স্কেল রয়েছে। এসব স্কেলের মধ্যে মাত্র তিনটি ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানের বিএসটিআইর অনুমোদন নেই। ট্রাফিক বিভাগের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও নেয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। শুধু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করেই চলছে স্কেলের রমরমা বাণিজ্য।

আরও পড়ুন: বাঘা বাঘা নেতাদের পেছনে ফেলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে আ.লীগের মনোনয়ন উঠল পেয়ারুলের হাতে

স্থানীয় শহিদুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে জানান, মাঝিরঘাট এলাকায় স্কেল ব্যবসা এখন জমজমাট। অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে স্কেল বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের কোনো অনুমোদন না থাকলেও প্রশাসনের নজরদারি নেই। এছাড়া অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে সড়কে প্রতিদিন যানজট হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জনান, মাঝিরঘাট সড়কে বসানো বেশিরভাগ ওজন মাপার যন্ত্রের সরকারি দপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো সার্টিফিকেট। কেবল সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এসব স্কেল বসিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এআর কম্পিউটার স্কেলস ও এআর পারফেক্ট স্কেলের মালিক মো. ফরিদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন ২২টি নৌঘাট রয়েছে, মাঝিরঘাটে ১০টি লবণ মিল রয়েছে। জাহাজ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য নামে, লোড-আনলোডের কাজ হয়। এসব পণ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি ৩০ সেকেন্ডে স্কেলে মাপা হয়। এতে যানজট হওয়ার কথা নয়। বরং স্ক্র্যাপ বহন করার জন্য কেএসআরএম, বিএসআরএম, আবুল খায়ের কোম্পানি যে ট্রেইলারগুলো রাস্তায় নামিয়েছে এসব তো কোনো যানবাহনে পড়ে না। এগুলোকে দানব বলা যায়। ওরাই রাস্তা শেষ করছে। ওদের কারণে যানজট হচ্ছে। এসব গাড়ি রাতে নামাতে পারে। কিন্তু সেটা তো কেউ বলছে না।

জানতে চাইলে সিএমপি দক্ষিণ বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) অনিল বিকাশ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাঝিরঘাট এলাকায় যত্রতত্র বসেছে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন মাপার স্কেল। প্রতিদিন এসব স্কেলে ওজন মাপাতে আসে শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকে। সেখানে দুজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও তিনজন ট্রাফিক কনস্টেবল সারাদিন কাজ করে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। আমরা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি এসব স্কেল সড়কের পাশ থেকে সরানোর জন্য। কিন্তু তারা কেউ কথা শুনছেন না। এখন অভিযান পরিচালনা করে এসব স্কেল সরানো হবে।

একই প্রসঙ্গে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এনএম নাসিরুদ্দিন বলেন, সড়কের ওপর বসানো এসব স্কেলের কারণে নিত্য যানজট হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখলে ভালো হয়।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাঝিরঘাট এলাকায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে পণ্যের ওজন মাপার স্কেল বসিয়েছে দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অনুমোদন নেয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে এসব অনুমোদনহীন স্কেল শিগগির সরানো হবে।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!