‘লুটপাট’—৮ হাজার কোটি টাকা মেরে খেল নুরজাহান গ্রুপ, এমডিকে ধরতে কড়া হুকুম

শীর্ষ ঋণখেলাপি নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনকে গ্রেপ্তারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) অর্থঋণ আদালতের বিচারক মজাহিদুর রহমান এ নির্দেশ দেন।

এর আগে ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তোলা হলেও কোনো দরপত্র পড়েনি। পরে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

বাকিরা হলেন- জহিরের স্ত্রী মনোয়ারা প্রকাশ তাসমিন আহামেদ, ভাই টিপু সুলতান ও জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের এবং ফরহাদ মনোয়ার। তাদের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কানাডায় টাকা পাচারকারী ধনকুবের জহির আহমেদ রতন এবং তার ভাই ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন অর্থঋণ আদালত।

এছাড়া একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিরা দেশত্যাগ করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামি জহির আহমেদ রতন, টিপু সুলতান, জসিম উদ্দিন এবং ইফতখোর আল জাবের দেশেই ছিলেন। তবে অন্যরা দেশত্যাগ করেন।

এরপর গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাভোগ করছেন। তবে অন্যদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে চলমান ২০টি মামলায় জহির আহমেদ রতন ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তারা দেশে থাকা পরও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়।

তিনি আরও বলেন, এবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের জন্য কোতোয়ালী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আদেশের কপি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে এমডি জহির আহমদ রতন ও তার দুভাই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। রতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০টি মামলা রয়েছে। এ কারণে আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তার কোনো হদিস পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তা সুদ ও দণ্ড সুদসহ ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দাঁড়ায়। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পাওনা আদায়ের জন্য ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন অর্থঋণ আদালত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য ৪০ কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

রতনের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন কানাডায়। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!