রাহুর কবলে সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন সার্ভার, ইপিজেডের দোকানে টাকায় মেলে সনদ

রাহুর কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন সার্ভার। টাকা দিলেই রাতারাতি তৈরি হয়ে যায় জন্মনিবন্ধন সনদ। নগরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের সার্ভার থেকে ইতোমধ্যে এন্ট্রি হয়ে গেছে শত শত ভুয়া জন্মনিবন্ধন।

এদিকে বিষয়টি ধরা পড়ার পর মাঠে নামে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগ। তারা জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। ইপিজেডের এক কম্পিউটার দোকান থেকে উদ্ধার করেছে ২টি সিপিইউ, ২টি মনিটর, ২টি প্রিন্টার ও ১টি মোবাইল ফোন। ২৫ জানুয়ারির সেই অভিযানে গ্রেপ্তাররা হলেন— কম্পিউটার দোকানদার মো. রাকিব হোসেন ওরফে হিমেল (২৭) ও মনি দেবী।

কাউন্টার টেররিজম জানায়, ২৫ জানুয়ারি বিকালে মনি দেবী নামে এক মহিলা ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে তার জন্মনিবন্ধন সনদের মূলকপি চান। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, তার আবেদনটি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে আগে অবৈধভাবে অজ্ঞাত ব্যক্তির আপলোড করা ৪০৯টি নম্বর সনদের একটি। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, আবেদনটি ইপিজেড থানা এলাকার একটি কম্পিউটার দোকানে করা হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি জানার পর মনি দেবীকে হেফাজতে নেয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বিভাগ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মনি দেবী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায়, তার প্রথম জন্মনিবন্ধন সনদ থাকার পরেও নামের টাইটেল পরিবর্তন এবং বয়স কমিয়ে অবৈধভাবে দ্বিতীয় জন্মসনদ সংগ্রহ করেন।

এরপর মনি দেবীর দেওয়া তথ্যে ইপিজেড থানা এলাকা থেকে কম্পিউটার দোকানদার মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ হিমেলকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ২টি সিপিইউ, ২টি মনিটর, ২টি প্রিন্টার এবং ১টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

অন্যদিকে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও উদ্ধার করা ডিভাইস এবং ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যালোচনায় দেখা যায়, হিমেল দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে চক্রের অন্য সদস্যের সহায়তায় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করছিলেন। তিনি এ পর্যন্ত একাধিক ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ও বিতরণ করেছেন।

তারা তথ্য সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রাথমিক নিবন্ধন করে এবং ওই তথ্য তাদের চক্রের অপর সদস্যদের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠায়। ওই চক্রের সদস্যরা জন্মনিবন্ধন সার্ভারে ঢুকে জাল জন্মসনদ তৈরি করে পুনরায় চক্রের সদস্যদের পাঠাত টাকার বিনিময়ে। সেই ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে বিভিন্ন জনের কাছে সরবরাহ করা হতো।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, আটক মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ হিমেলের বিরুদ্ধে নগরের ইপিজেড থানায় ভুয়া জন্মসনদ জাল-জালিয়াতির অভিযোগের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

উপপুলিশ কমিশনার আরও বলেন, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী মো. রহিম উল্ল্যাহ চৌধুরী একটি নিয়মিত মামলা করেছেন। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এনবি/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!