৪ বছর পর রাইফার জন্মদিন এলেও রুবেল—রুমানার প্রতীক্ষা শেষ হয়নি

সাংবাদিককন্যা রাফিদা খান রাইফার দ্বিতীয় জন্মদিন আজ (২৯ ফেব্রুয়ারি)। বেঁচে থাকলে এদিনে ৮ বছর পূর্ণ হতো তার। ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিল রাইফা। সেই হিসেবে চার বছর পরপর হয় রাইফার জন্মদিন। যেহেতু চার বছর পরপর রাইফার জন্মদিন আসে তাই পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ ঘটা করেই প্রতিবার রাইফার জন্মদিন পালনের ইচ্ছে ছিল।

কিন্তু মাত্র দুই বছর চার মাস বয়সেই পৃথিবীকে বিদায় জানাল রাইফা। তাই ২৯ ফেব্রুয়ারি রাইফার দ্বিতীয় জন্মদিনটা ঘটা করে আর পালিত হচ্ছে না। রাইফার জন্মদিন পালন করার স্বপ্নটা আজীবন স্বপ্নই থেকে গেল রাইফার পরিবারের।

অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে মেডিকেল মার্ডারের শিকার হয়ে অকালে না ফেরার দেশে চলে গেছে রাইফা।

রাইফার মা রুমানা খানম বলেন, জন্মদিনের কেক খুব পছন্দ করতো রাইফা। তাই মাঝে মাঝেই ওর বাবা বাসায় কেক নিয়ে আসতো। কেক পেয়ে রাইফা ভীষণ খুশি হতো। ২৯ ফেব্রুয়ারি ওর জন্ম হওয়ায় চার বছর পরপর হয় রাইফার জন্মদিন। এ কারণে বেশ ঘটা করেই রাইফার জন্মদিন পালনের স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিন্তু চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মাত্র দুই বছর চার মাস বয়সেই অকালে মৃত্যুবরণ করে রাইফা। অথচ ওর বড় কোনো অসুখ ছিল না। চিকিৎসকদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে সে। যাদের কারণে আমার কোল খালি হয়েছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আরও পড়ুন : শিশু রাইফার মৃত্যু: তিন বছর ধরে ঝুলে আছে তদন্ত

রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান বলেন, সামান্য গলা ব্যাথা নিয়ে ২০১৮ সালের ২৮ জুন ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রাইফাকে। কিন্তু ওই হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তাকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং অবহেলা করা হয়। আমি বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা আমার মেয়েকে রফিসিন নামের একটি অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করেন। আমার আপত্তির মুখে চিকিৎসকরা বলেন, এই অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করা হলে আপনার মেয়ের কোনো ক্ষতি হবে না বরং ওর গলা ব্যাথা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ওই অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করার পর আমার মেয়ের শরীরের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে। পরে অভিজ্ঞদের মাধ্যমে জানতে পারি, ‘ওভারডোজ অ্যান্টিবায়োটিক’ পুশ করায় আমার মেয়ের রিঅ্যাকশন হয়েছিল। ওই রিঅ্যাকশনের কারণে তার শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হয়। খিঁচুনির কারণে আমার মেয়ের যখন মুমূর্ষু অবস্থা, তখন আবারও ভুল চিকিৎসার শিকার হয় সে। তাকে এনআইসিইউতে না নিয়ে কেবিনের ভেতর ‘ওভারডোজ সেডিল’ পুশ করা হয়। এভাবে বারবার অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মারা যায় আমার একমাত্র শিশুকন্যা রাইফা।

সাংবাদিক রুবেল খান বলেন, এ মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে রাইফার চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ওই ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি ত্রুটি চিহ্নিত করে। তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা যদি সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন দুটির সহযোগিতা নেন তাহলে মামলার তদন্তকাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে।

চিকিৎসায় অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু প্রতিরোধ, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এবং চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের স্বার্থে রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার দাবি জানান রাইফার বাবা রুবেল খান।

রুবেল খান অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের কতিপয় বিএমএ নেতাও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বাঁচানোর জন্য এখনও নানামুখী অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ক্ষমতা ও টাকার জোরে সবকিছু নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন রাইফার শোকাহত বাবা সাংবাদিক রুবেল খান।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৯ জুন মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুকন্যা রাইফা। ওই বছরের ১৮ জুলাই ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় এজাহার দায়ের করেন রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। এজাহার দায়েরের দুদিন পর এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মামলায় ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব ও ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খানকে আসামি করা হয়।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!