যেভাবে বদলে গেল পতেঙ্গা ভূমি অফিস, ৯০ দিনে ৩৪ মামলার ৩১টিই নিষ্পত্তি

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সত্তোরোর্ধ্ব জাহাঙ্গীর আলম। এক সময় বিদেশ থাকতেন। নিজ এলাকায় কিনেন ২৪ একর জমি। কিন্তু করণিকের ভুলের কারণে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রায় এক যুগ। পতেঙ্গা সার্কেলে মিস মামলা করেও তিনি পাননি সমাধান। তবে তাঁর দীর্ঘদিনের এ সমস্যা এক মাসের মধ্যেই সুরাহা করে দিয়েছেন সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

শুধু জাহাঙ্গীর আলম নন, পতেঙ্গার এমন অনেক মানুষের জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের সমস্যার দ্রুত সমাধান দিচ্ছেন সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান। আগে যেখানে দালালের দৌরাত্ম্যে অসহায় ছিল সাধারণ জনতা, সেখানে দালাল নির্মূলে এখন সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারছেন তাঁর সঙ্গে। প্রতি সপ্তাহে আয়োজন করা হচ্ছে গণশুনানিও। সবচেয়ে বড় কথা, গত তিন মাসে ৩৪ মামলার মধ্যে তিনি নিষ্পত্তি করেছেন ৩১ মামলা। এ অবস্থায় পতেঙ্গা সার্কেলের নিজস্ব ভবনের জন্য আবেদনও করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান।

জানা গেছে, মিজানুর রহমান পতেঙ্গা সার্কেলে যোগ দেওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা রুজু হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ মামলার নিষ্পত্তি হয়, বাকি তিনটি চলমান। তিনি চালু করেছেন ঘরে বসে অনলাইনে খাজনা দেওয়া ও নামজারির আবেদন সুবিধা। সপ্তাহের প্রতি বুধবার চালু করেছেন গণশুনানি। ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ভুমি অফিসের সামনে সাঁটানো হয়েছে সিটিজেন চার্টার, সৌন্দর্যবর্ধনে টবে লাগানো হয়েছে নানান জাতের গাছের চারা।

সরেজমিন পতেঙ্গা ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমিসেবা নিতে বন্দর-পতেঙ্গার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন গ্রাহকরা। কয়েকজন সেবাগ্রহীতা জানান, করণিকের ভুল, নামজারি, মিস কেইসসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে তারা এখানে এসেছেন। দালাল ছাড়াই তারা সেবা পাচ্ছেন। এমনকি সরাসরি এসিল্যান্ডের সঙ্গেও কথা বলতে পারছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুনির্দিষ্ট কাজ ছাড়া অযথা ভূমি অফিসে কেউ ঘোরাফেরা করলে তাদের বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া একাধিক মামলা হলে উভয়পক্ষকে ডাকা হয়। প্রয়োজনে সপ্তাহে তিনদিন গণশুনানি হয়।

পতেঙ্গার পূর্ব হোসেন আহমদপাড়ার মাহাবুব হাসান বলেন, দুবছর আমার পৈত্রিক ভূমি নামজারি করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্তমান এসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের পর মাত্র ১৭ দিনে ১১০০ টাকা সরকারি ফি দিয়ে জায়গার নামজারি করেছি।

পতেঙ্গার আরেক বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের জায়গার বিএস নামজারি খতিয়ান আমাদের নামে নেই। বিএস নামজারি খতিয়ানের জন্য অতীতে বিভিন্ন সময় ভূমি অফিসে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। দালাল বলেছে, টাকা দিলে আমার কাজ করে দেবে। পরে এসিল্যান্ডের কাছে গেলে তিনি জায়গার সব কাগজপত্র দেখে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

পতেঙ্গার ভারটেক্স গ্রুপের প্রতিনিধি মো. কায়সার আলম বলেন, প্রায় দুবছর আগে নামজারি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে আবেদন করলেও কোনো ফল পাইনি। মিজানুর রহমান সাহেব আসার এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা মোবাইলে ম্যাসেজ পেয়েছি। তারপর ভূমি অফিস থেকে ফোন দিয়েছে আমাদের। কোনো তদবির ছাড়াই আমাদের নামজারি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বতর্মান সরকার ভূমিসেবা সহজ করতে ডিজিটাল ভূমিসেবাসহ নানান উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভূমি সেবাসমূহ সেবাগ্রহীতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আমি সবসময় আন্তরিক। মানুষ যেন তার সেবা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, দালালের খপ্পরে পরে টাকা-পয়সা হারিয়ে যেন প্রতারিত না হন।

তিনি আরও বলেন, সমস্যার সমাধান পেতে আমার দরজা সব সময় খোলা। কোনো ধরনের ভীতিজড়তা না রেখে যেকেউ তাদের সমস্যা নিয়ে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সেবাগ্রহীতার জায়গার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে সরেজমিন তদন্ত করে চেষ্টা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান দিতে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের বিষয়ে এ মুহুর্তে কোনো মন্তব্য করবো না। আমি সরেজমিন পতেঙ্গা ভূমি অফিস ভিজিট করবো, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবো। তবে কোনো এসিল্যান্ড ভালো কাজ করলে ভালো লাগে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!