প্রবাসীর বউকে খুন করে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে লুকিয়ে ছিল ৬ বছর

নগরের বায়েজিদ এলাকার গৃহবধূ পারভিন আক্তার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. ইসহাককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাউজান থানার সুলতানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭ এর একটি দল। আটক মো. ইসহাক (৩৩) হাটহাজারী থানার ফটিকা এলাকার মো. কামাল হোসেনের ছেলে।

নিহত পারভিন বায়েজিদ রৌফাবাদ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির দুবাই প্রবাসী মো. নুরুল ইসলামের স্ত্রী।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় নিহত পারভিনের ছেলেকে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক আসেন। রাত নয়টার দিকে ছেলেকে পড়ানো শেষে গৃহশিক্ষককে দরজায় বিদায় দিতে যায় ছেলে। ছেলে শিক্ষককে বিদায় দিয়ে দরজা বন্ধ করতে গেলে অপরিচিত একজন বাসায় ঢুকে যায়।

আরও পড়ুন: পানি না আসার কারণ খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন প্রবাসীর স্ত্রী

সঙ্গে সঙ্গে আরও চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তি বাসায় ঢুকে পারভিন ও তার ছেলেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আলমিরার চাবি দিতে বলে। পারভিন চাবি না দিয়ে চিৎকার করলে আসামিরা পারভিনের মুখ চেপে ধরে। তার পরিহিত শাড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে গলায় ফাঁস ও মাথায় আঘাত করে বাসা থেকে স্বর্ণলংকার, মোবাইল, ট্যাব, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর পারভিনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর নিহত পারভিনের স্বামী মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরও জানা যায়, নিহত পারভিনের স্বামী নুরুল আলম ও তার বড় ভাই আব্দুস শুক্কুর যৌথ মালিকানায় বায়েজিদ থানার রৌফাবাদ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটিতে ছয়তলার একটি বিল্ডিং করেন। সেখানে ইয়াছিন দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন। ইয়াছিন আবার নুরুল আলমের দুঃসম্পর্কের ভাগিনা হয়।

আরও পড়ুন: আবার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ওসি প্রদীপ

নুরুল আলম ও তার বড় ভাই আব্দুস শুক্কুর দুবাই প্রবাসী। একপর্যায়ে আব্দুস শুক্কুর নিজ উদ্যোগে ইয়াছিনকে দুবাই নিয়ে যায়। যাওয়ার পর তার সঙ্গে আব্দুস শুক্কুরের মনোমালিন্য হয়। পরে ইয়াছিন দেশে চলে আসে। দেশে আসার পর নুরুল আলম ও আব্দুস শুক্কুরের ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

ক্ষোভ থেকে ইয়াছিন তার বন্ধু মনসুরের সঙ্গে ডাকাতি ও হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আরও দুই বন্ধুকে সহযোগী হিসেবে নেন। তারপর ২০১৬ সালের ৫ মার্চ রাতে শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে পারভিনকে খুন করে। এরপর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

দায়ের বরা হত্যা মামলায় আদালত ইয়াছিন, মনসুর ও আবু তৈয়ব ওরফে রানার উপস্থিতিতে ইসহাকসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর থেকে ইসহাক আত্মগোপন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করে আসছিলেন। রায় ঘোষণার দীর্ঘ ছয় বছর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইসহাককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব।

আরও পড়ুন: মেম্বার খুন—রাজধানীতে লুকিয়ে ছিলেন ইউপি সদস্য বেলাল

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বায়েজিদ রৌফাবাদ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির একটি বাসায় গৃহবধূ পারভিন হত্যা মামলার পলাতক আসামি ইসহাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই হত্যা মামলায় ইসহাকসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

রায়ের সময় বাকি তিনজন আদালতে উপস্থিত থাকলেও ইসহাক পলাতক ছিলেন। তারপর ইসহাককে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র‍্যাব। একপর্যায়ে ইসহাক রাউজান থানার সুলতানপুর এলাকায় অবস্থান করছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এএইচ/এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!