নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় মসজিদের মাইকের শব্দ কমানোর চিঠি দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ চিঠির বিপরীতে খুলশী থানায় জিডি করেছে মসজিদ কমিটি।
মসজিদ কমিটির কাছে চিঠিটি দিয়েছিলেন ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, চিটাগং ক্লাব সভাপতি ও পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খাঁন এবং তাঁর স্ত্রী হাসিনা খাঁন।
তবে এ সমস্যার সুন্দর সমাধানের আশা করছেন থানা পুলিশ।
এদিকে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মসজিদ কমিটি ও অন্যান্য সম্মানিত সদস্যের নিকট বারবার অনুরোধ করেও এই পর্যন্ত আপনারা শোনার ও বুঝার চেষ্টা করছেন না। আমাদের এই এলাকায় একইসঙ্গে ৮ থেকে ৯টি মসজিদ থেকে আজান শোনা যায়। অথচ আপনারা কেউ কেউ বলেছেন যে, আপনারা যেহেতু দূরে থাকেন শোনার সুবিধার জন্য মাইকের আওয়াজ বাড়িয়ে রাখেন। এই বিষয়টি আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই পছন্দ করবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শুক্রবারে মসজিদে মাইকের মাধ্যমে ওয়াজ প্রচার করা হয়। আপনাদের অনুরোধ করেছি এই আওয়াজ মসজিদের ভিতরে রাখতে। কিন্তু এই পর্যন্ত তাও হলো না। অনেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অসুবিধা হতে পারে। অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা বিকট আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বুঝা যায় না। আপনাদের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি মসজিদুল হারাম মসজিদুল নববী ঐ সকল মসজিদে এই ধরনের মাইক ব্যবহার হচ্ছে কিনা খবর নেন। আপনারা যদি আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন তবে সব ধরনের সহযোগিতা থেকে আমরা বিরত থাকব।
এদিকে এই চিঠির পরপরই ওই এলাকায় উত্তেজনা শুরু হয়। উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখনও। বিশেষ করে আজানের আওয়াজ বন্ধে ওনার (নাদের খাঁন) অনুরোধ অগ্রাহ্য করলে সবধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকার কথায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে শাহী জামে মসজিদ কমিটির মোতোয়ালি ও মহল্লা কমিটির সভাপতি মো. আমির হোসেন খান বলেন, আমাদের এলাকায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। এলাকায় ৭টি মসজিদ রয়েছে। কিন্তু মসজিদ থেকে দূরে যারা থাকেন তাদের কাছে আজানের ধ্বনি পৌঁছে না। এ কারণে মসজিদের মাইকের শব্দ কিছুটা বাড়তি রাখতে হয়।
তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর মসজিদের মাইকের শব্দের জন্য অভিযোগ করেন নাদের খাঁন ও তাঁর স্ত্রী হাসিনা খান। এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি পাঠান। কিন্তু মসজিদ কমিটি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেনি। কেন প্রতিবাদ করেনি এজন্য মহল্লাবাসী মসজিদ কমিটিকে দোষারোপ করছেন। তাছাড়া শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় কেন এ বিষয়টি জানানো হয়নি তা নিয়েও এলাকাবাসী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, গত সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর খুলশি থানায় জিডি করা হয়েছে। কর্তব্যরত অফিসার আনছারুল তা গ্রহণ করেছেন। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় মতবিনিময় সভায় পুলিশকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে এলাকাবাসী আইন হাতে তুলে না নেওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়। থানা পুলিশ বিষয়টি দেখছেন।
এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা হলে শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে।
যোগাযোগ করা হলে নাদের খাঁন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আগামী শুক্রবার তারা একটি অকারেন্স ঘটানোর চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছি।
অভিযোগের বিষয়ে নাদের খাঁনের সহধর্মীনি হাসিনা খাঁন বলেন, এলাকাসহ মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সবসময় পাশে ছিলাম। এলাকার সুন্দর পরিবেশ বিনির্মাণে সড়কের দেয়ালে কোরআন-হাদিসের বানী লাগিয়েছি। যেন প্রতিটি ধর্মালম্বীদের উপকারে আসে। এলাকায় অনেকগুলো মসজিদ থাকার কারণে সব আজান একসঙ্গে শুরু হয়। যার কারণে একটিও বোঝা যায় না। এ কারণে মাইকের শব্দ কিছুটা কমিয়ে আনতে বলেছি। তাছাড়া জুমার দিন মসজিদের মাইকে ওয়াজ প্রচার করা হয়। এটি মসজিদের ভেতরে রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এ পর্যন্ত কিছুই হলো না।
তিনি বলেন, মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিকট শব্দে শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অসুবিধা হতে পারে। অসুস্থ লোকের অসুবিধা হতে পারে। অন্য ধর্মালম্বীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। এছাড়া বিকট শব্দের কারণে কী বলছে বোঝা যায় না। শাহী জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. অহিদ চৌধুরী মুক্তি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম ও এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল নববীতে এ ধরনের মাইক ব্যবহার হচ্ছে কিনা খবর নিতে বলেছি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খুলশি থানার অফিসার ইনচার্জ সন্তোষ কুমার চাকমা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মসজিদ কমিটি ও নাদের খাঁনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই একটি সুন্দর সমাধান চান। নাদের খাঁন ঢাকা থেকে এলে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করা হবে।
ওসি আরও বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর কোনো ধরণের কর্মসূচির কথা আমরা জানতে পারিনি।
আরএস/আরবি