ব্রয়লার মুরগিতে ‘বিষ’—বাড়ছে ক্যান্সার হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ

চট্টগ্রামে বাড়তি দামের কারণে আলোচনার তুঙ্গে ব্রয়লার মুরগির বাজার। এরমধ্যে মুরগি নিয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে এসেছে। গবেষণায় ব্রয়লার মুরগিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ভারী ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ মুরগি খেলে মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এক গবেষণায় ব্রয়লার মুরগির কলিজা, হাড় ও মাংসে মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে দশ গুণ বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন গবেষক দল। এছাড়া দ্বিগুণ মাত্রায় পারদ, ক্রোমিয়াম, সীসাসহ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অন্যান্য ভারী ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ব্রয়লার মুরগির ওপর এ গবেষণা চালান। রাজধানীর সাভারের কয়েকটি এলাকা থেকে মুরগির নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা চালান গবেষক দল।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেহে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা শূন্য দশমিক এক মিলিগ্রাম হলেও বাজারে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগিতে দশ দশমিক উনপঞ্চাশ মিলিগ্রাম আর্সেনিক রয়েছে। একইভাবে মানবদেহে নিকেল ধাতুর সহনীয় মাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ মিলগ্রাম হলেও এ মুরগিতে দুই দশমিক উনাশি মিলিগ্রাম এ ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিন দশমিক সাতাশ মিলিগ্রাম, যেখানে মানবদেহের জন্য এ ধাতুর সহনীয় মাত্রা এক মিলিগ্রাম।

মানবদেহে পারদ ও সীসার সহনীয় মাত্রা যথাক্রমে শূন্য দশমিক দুই ও শূন্য দশমিক এক মিলিগ্রাম হলেও গবেষণায় ব্রয়লার মুরগিতে এ দুই ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক সাতান্ন ও শূন্য দশমিক ৪৬ মিলিগ্রাম। পোলট্রি মুরগিতে এসব ভারী ধাতুর অতিরিক্ত মাত্রায় উপস্থিতি মানবদেহে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মতো নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায় বলে মনে করছেন গবেষকরা।

এদিকে সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী তাশরিফ আহমেদের গবেষণায়ও ব্রয়লার মুরগি নিয়ে উঠে এসেছে এমন ভয়ংকর তথ্য। এ গবেষণায় ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড়ে অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষতিকর নিকেল, ক্রোমিয়াম, সীসা ও আর্সেনিকের উপস্থিতি খুঁজে পান তাশরিফ। এ শিক্ষার্থীর মতে, খামারিরা ব্রয়লার মুরগিকে ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ান। এ কারণে ব্রয়লার মুরগিতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর চারটি ভারী ধাতুর অস্তিত্ব মিলেছে।

পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের এ শিক্ষার্থীর গবেষণার তথ্যমতে, ব্রয়লার মুরগির মাংসে নিকেল ধাতুর উপস্থিতি মিলেছে প্রায় ১২৮ মিলিগ্রাম এবং হাড়ে ৭৯ মিলিগ্রাম। এ মুরগির মাংসে ক্রোমিয়াম ধাতু পাওয়া গেছে ১২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম এবং হাড়ে পাওয়া গেছে ১০ দশমবক ৪৫ মিলিগ্রাম। মাংসে সীসা পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ৫২ মিলিগ্রাম এবং হাড়ে মিলিছে ৩ দশমিক ৭৯ মিলিগ্রাম।

এছাড়া ব্রয়লার মুরগির মাংসে আর্সেনিক মিলেছে ০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম এবং হাড়ে এ ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া যায় ০ দশমিক ৩৭ মিলিগ্রাম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার তুলনায় অনেকগুণ বেশি এসব ধাতুর উপস্থিতির কারণে ব্রয়লার মুরগি মানবদেহে নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ও গবেষক তাশরিফ আহমেদ বলেন, আমি খুলনা সিটি করপোরেশনের বাজারগুলো থেকে মুরগি সংগ্রহ করি। এরপর ল্যাবে মুরগির মাংস ও হাড় আলাদা করে সেগুলো ভারী ধাতুর উপর পর্যবেক্ষণ করি। এ সময় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ভারী ধাতুর উপস্থিতি দেখতে পাই।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, খামারিরা লাভজনক ব্যবসার জন্য যে সস্তা খাবার ব্যবহার করেন তা ট্যানারির বর্জ্য থেকে তৈরি করা হয়। ট্যানারির বর্জ্যে ক্রোমিয়াম, লেড বা আর্সেনিক থাকে, যা আল্টিমেট খাবারেও চলে আসে। ব্রয়লার মুরগিতে ভারী ধাতুর এটাই হচ্ছে প্রধান উৎস।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!