সংবর্ধনাতেই ঘুরছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। স্বেচ্ছাচারিতা, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আদর্শ বাস্তবায়ন, টাকার হিসাবে অনিয়ম, এজিএমে অডিট রিপোর্ট না হওয়াসহ সংবর্ধনা প্রদান সংগঠনে পরিণত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় আগামী ২৬ এপ্রিল ঈদ পুনর্মিলনী বয়কটের ডাক দিয়েছে ২২তম ব্যাচ।

সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, ২০১৯ সালে আত্মপ্রকাশ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের। শুরু থেকেই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রকেরা সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা নিয়ে অন্ধকারে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

শুরু থেকে যাঁরা পুনর্মিলনীতে ছিলেন তাঁদের অনেকেরই স্থান হয়নি বর্তমান কমিটিতে। আবার যারা কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিষ্ক্রিয়। মূলত কয়েকজনের ইচ্ছে অনুযায়ীই চলছে সংগঠনটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন বলেন, সংগঠনটির কোনো জবাবদিহি নেই। নেই গঠনতন্ত্র, বার্ষিক সাধারণ সভা কিংবা আয়-ব্যয়ের হিসাব। নির্দিষ্ট একটি জেলার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের খুশি করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের অনেক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, কমিটিতে নারীদেরও পর্যাপ্ত স্থান হয়নি। নির্বাহী কমিটির ৬৩ সদস্যের মধ্যে নারী মাত্র ৭ জন। অপরদিকে ২০২২ সালে প্রকাশিত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টরিতে অনেক নিবন্ধিতদের নামও উঠেনি। কিন্তু চবিতে কোনোদিন না পড়েও ডিরেক্টরিতে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অনেকের।

চবির কয়েকজন ক্ষুব্ধ শিক্ষক জানান, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে এদের কার্যক্রমের মিল নেই। ঢালাওভাবে চাঁদা তুলে নিজেদের ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান করছেন। এটি একটি সংবর্ধনা প্রদান সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

তারা বলেন, চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নামে নগরের চারুকলা ইনিস্টিটিউট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারে স্থায়ী অফিস বরাদ্দের পরও সরকার থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি লিজ নেওয়ার উদ্দেশ্য কেউ জানে৷ না। সংগঠনের নামে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় নামমাত্র মূল্যে জমি কেনার সিদ্ধান্তে হতবাক অনেকে।

সংগঠনের কয়েকজন সদস্য জানান, অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনীতে ডিরেক্টরি প্রেস ও অনেক শিল্পীর বিল পরিশোধ করা হয়নি। অথচ খরচের হিসাবে ঠিকই দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য এনআইডি, পাসপোর্ট, একাডেমিক সনদের কপিসহ পরিবারের সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ। সবমিলিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন।

এদিকে এসব অনিয়মের কারণে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ঈদ পুনর্মিলনী বয়কটের ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন চবি ২২তম ব্যাচের অসীম দাশ।

মো. কলিম নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, ‘চবি এলমনাই এসোসিয়েশনকে বর্তমানে মাফিয়াদের এলিট ক্লাবে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমান কমিটি রাতের অন্ধকারে করা পকেট কমিটি’।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম। তাঁর বক্তব্য, নিয়ম মেনেই সবকিছু হচ্ছে।

কোষাধ্যক্ষ কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) জানান, সাধারণ সভা ও অডিট হয়েছে। অডিট ফার্মের নাম কাশেম এন্ড কোম্পানী।

অপরদিকে চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ বলেন, আমরা কয়েকজন প্রথম অ্যালামনাই গঠনের উদ্যোগ নিই। চবির সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য একটা প্লাটফর্ম করতে অনেকের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। শুরুটা আমার হাত ধরে হয়। আমরা চাই, সবার মতামতের ভিত্তিতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কাজ করুক। বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ আছে। লাইফ মেম্বার ও সার্টিফিকেট প্রদানের ব্যাপারে সংগঠনের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও অনেকের মুখে অভিযোগগুলো শুনেছেন বলে জানান চাকসুর ভিপি ও সংগঠনের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে খোদ কমিটির কয়েকজন জানান, প্রথম পুনর্মিলনীর কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া থেকে শুরু করে বেশিরভাগ খাতেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি স্পন্সর করেছেন। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এবার ঈদ পুনর্মিলনীতে ফের লাইফ মেম্বার ও সার্টিফিকেট বিক্রির নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয় ইত্যাদি কেন সংগ্রহ করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হলে অনেক অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বলে শঙ্কা করেন তাঁরা।

তাঁরা প্রশ্ন করেন, কিছু ব্যক্তিকে মঞ্চে তুলে ক্রেস্ট দেওয়াই কি চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কাজ?

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!