বাতাসে উড়ছে বিষ, মানুষের শরীরে রোগের আঘাত কর্ণফুলীতে

কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট এলাকার যাত্রী ছাউনির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে কয়লার স্তূপ। খোলা আকাশের নিচে গড়ে ওঠা একেকটি কয়লার স্তূপ যেন পাহাড়সম। কয়লার বিষাক্ত ধোঁয়া ও এর গ্যাসে অতিষ্ঠ হয়ে হাঁফাচ্ছে এলাকার মানুষ। সবমিলিয়ে এখানকার বাতাস যেন এখন বিষ। নিঃশ্বাসে সেই বিষ ঢুকছে মানুষের শরীরে।

জানা যায়, মেসার্স সাহারা এন্টারপ্রাইজ নামে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করে। সেই কয়লা ওই স্থানে মজুদ রেখে তা অন্যত্র বেচে। অথচ কয়লার এই ডিপোটির ফায়ার সার্ভিস কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই! তারপরেও হাজার হাজার মেট্রিক টন কয়লা অবৈধভাবে মজুদ রেখে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, শুধু চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাট নয়, নতুনব্রিজের নিচে চরপাথরঘাটা অংশ এবং শিকলবাহা ও জুলধা ইউনিয়নের বিভিন্ন খোলা জায়গায় ইট, পাথর, বালি এবং কয়লা মজুদ করে অনেকেই নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইর ।

স্থানীয়রা জানান, কয়লাগুলো প্রথমে জাহাজ থেকে নামিয়ে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ড্যাম্প করে রাখা হয়। তারপর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে তা ট্রাকে লোড করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান।

এদিকে খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক এই কয়লা ড্যাম্প করায় চরপাথরঘাটার অনেক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। মানুষ বসবাসের জায়গায় গ্রামের মধ্যে কয়লা রাখায় দিন-রাত বাতাসের মাধ্যমে কয়লার ধুলা ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চরপাথরঘাটা পুরাতন ব্রিজঘাট কয়লা ডিপোর মালিক দাবিদার আনোয়ার সাদত মোবারকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. তৈয়ব আলী বলেন, কয়লার ধোঁয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যত্রতত্রভাবে কয়লা রাখার জন্য স্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত সমস্যা নিয়ে এলাকার অনেক রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কর্ণফুলীর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, জনসম্পৃক্ত উন্মুক্ত এলাকায় কয়লা রাখা অবশ্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

একই প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, জনবসতির দেড় কিলোমিটারের মধ্যে কয়লার ডিপো করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া কয়লার স্তূপ উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখার বিধানও রয়েছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!