চাঁদাবাজি—খুনের হুলিয়া, মামলা খেল পাঁচলাইশ থানার সেই ওসি

চট্টগ্রামে পাঁচলাইশ থানার ওসির বিরুদ্ধে হুমকি, চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় থানার এসআইসহ আরও কয়েকজন আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ আদেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. অলি উল্লাহ্।

মামলার আসামিরা হলেন- পাঁচলাইশ থানার রহমতগঞ্জ রোডের মৃত ওয়াহেদ আজগর চৌধুরীর ছেলে আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী (৪২), পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদার এবং এসআই মো. জাকিরসহ (৪০) অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জন।

আরও পড়ুন : পাঁচলাইশের ওসির বিরুদ্ধে মামলা, ছাত্রকে থানায় ধরে নিয়ে বর্বর নির্যাতন

এ বিষয়ে কথা বলতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনকে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি। পরে যোগাযোগ করা হলে এসআই আখতারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওসি স্যার ছুটিতে আছেন, শনিবার রাতে তিন অফিসে আসবেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচলাইশের জাংগালপাড়ার রিজিয়া ম্যানসনের একটি ফ্লাটে ১৯৯৬ সাল থেকে বসবাস করছেন শামিমা ওয়াহেদ। ২০১২ সালে শামিমার স্বামী ওয়াহেদ আজগর চৌধুরী মারা যান। এর পর আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী মিথ্যা মামলা দিয়ে শামিমা ওয়াহেদ ও তার দুসন্তানকে হয়রানি করতে থাকেন।

এদিকে গত ২৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ভবন ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন ওসি মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদার। এসময় শামিমা ভবনটি নিয়ে দেওয়ানি আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেখালেও তা পাত্তা দেননি ওসি।

গত ১২ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওসির নির্দেশে আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী, এস আই জাকিরসহ আরও ৫/৬ জন সন্ত্রাসী ওই ভবনে ঢুকে পড়ে। এসময় শামিমার ভাই সাজ্জাদুল ইসলামকে গলা চেপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে এসআই জাকির অস্ত্র ঠেকিয়ে শামিমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আটকে রাখেন। এরপর প্রাণভিক্ষা চাইলে ওসির নির্দেশে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। ১৫ দিনের মধ্যে চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজতবাস ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন তারা।

আরও পড়ুন : পাঁচলাইশে ওসি—ভূমিদস্যু ‘একজোট’ গৃহবধূর জায়গা দখলে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’

গত ১৬ আগস্ট ফের ওই ভবনে ঢুকে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে বিশালাকার বিদেশি কুকুর নিয়ে অবস্থান করে ভবনের বাসিন্দাদের ভয় দেখান তারা। সবকিছু দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে পুলিশ।

পরে ১৭ আগস্ট শামিমা ওয়াহেদ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদার, এসআই মো. জাকির, আহমেদ ফয়সাল চৌধুরীসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আফরোজা আক্তার। তিনি বলেন, ভবন ছেড়ে দিতে বাদীর ছেলেকে থানায় নিয়ে শাসানো হয়। এমনকি ভবনে ঢুকে পুলিশের সামনেই ভাঙচুর ও মারামারি করে আসামিরা। এর আগে থানায় মামলা দিতে গেলেও মামলা নেননি ওসি। আজ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!