নব উচ্ছ্বাসে নববর্ষ

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা। অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও গর্বিত ঐতিহ্যের রূপময় ছটায় বৈশাখকে এভাবেই ধরাতলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আজ ১৪ এপ্রিল নতুন সূর্যোদয়ে সূচনা হলো বাংলা সালের আরো একটি বছর। আজই উৎসবপ্রিয় বাঙালির ঐতিহ্যগত প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষ পঞ্জিকার ১৪২৯তম বর্ষকে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

এ দিনটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে। আর বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হলো ‘শুভ নববর্ষ’। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এ উৎসব শোভাযাত্রাকে ‘মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করে।

মুঘল সম্রাট আকবরের খাজনা উপলক্ষ এখন উদযাপনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদের নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগরজীবনে। যোগ করেছে নতুন মাত্রার। বাংলার উৎসবে উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান।

বসন্ত ফুরালেও ফুরাইনি কোকিলের কুহুরব। বাতাসে ছড়াচ্ছে ফুলের বিমোহিত সুবাস। নব উল্লাসে, নব উদ্যমে, নব সূচনায় সমৃদ্ধ বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। এমনই আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর।

নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার খোলা। আর পুরনো দুঃখ মুছে নতুন সূচনার আহ্বানে বাংলার প্রাণে বাজে ‘তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক, যাক/এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো।’

নব প্রভাতে নগরের পথে পথে দেখা যায়- শুভ্রতার প্রত্যাশায় নতুন বর্ষের নতুন প্রভাতকে স্বাগত জানাতে পথে নেমেছে মানুষ। নানা আলোচনা-সমালোচনা-হুমকিকে তোয়াক্কা করে প্রাণের মেলবন্ধনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে বাঙালি। সেই পুরনো রীতিতে প্রথম প্রহরে সংগীত সমাবেশ আর মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমেই বরণ করে নেওয়া হচ্ছে নতুন বছরকে।

নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে কাটবে সারাবেলা এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে গৃহিনী শামীম আক্তার বলেন, রোজা রেখেছি, তবে উৎসব পালনে পেছানো যাবে না। ঘরে রেধেছি ইলিশ। ইফতারে আজ ভুড়ি ভোজন হবে সেই ইলিশে।

বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপনে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভেদাভেদ করা যাবে না দাবি করে রূম্পা বড়ুয়া বলেন, ষড়যন্ত্র তো হবেই। তা রুখে দাঁড়াতেও হবে। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে উৎসব পালনে নিজেই ঘর ছেড়ে বেরিয়েছি।

এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আরএস/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!