দুযুগ পর ধরা ‘বালু কামাল’—লুকিয়ে ছিল যুবককে এসিড মেরে

নগরের ডবলমুরিংয়ে সহকর্মীকে এসিড নিক্ষেপের ২৪ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পালাতক আসামি মো. কামাল হেসেন ওরফে বালু কামালকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর জেলার শাহরাস্থি থানার মেহের স্টেশন রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার বালু কামাল চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানাধীন কাউনিয়া এলাকার রসুল করিমের ছেলে।

আরও পড়ুন: ৪০০০ কোটি টাকা মেরে গা ঢাকা, চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের টিপু ধরা খেল গুলশানে

শনিবার (১ অক্টোবর) নগরের চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, মো. জাকারিয়া একজন কোরআনে হাফেজ ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। সেজন্য আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের বিপরীতে তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মো. রফিকের ‘দি মেট্রো রেফ্রিজারেশন’ নামক দোকানে ফ্রিজ মেরামতের কাজ শুরু করেন। ওই দোকানে শাহজাহান (আসামি কামালের বড় ভাই) নামের আরও একজনেরও অংশীদারত্ব ছিল। জাকারিয়া কাজের পাশাপাশি মালিক রফিকের ছেলে-মেয়েদের পবিত্র কোরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। জাকারিয়ার কাজে মুগ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক রফিক ও এলাকার লোকজন তাকে পছন্দ এবং সম্মান করতেন। আসামি কামালও একই ফ্রিজের দোকানে কাজ করতেন। মালিক রফিক ও এলাকাবাসীর জাকারিয়াকে পছন্দের বিষয়টি ভালো লাগত না কামালের। রফিক দোকান বিক্রির কথা ভাবলে জাকারিয়া তা কেনার আগ্রহ দেখান। তাই হাফেজ জাকারিয়াকে অপছন্দ এবং তার সঙ্গে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া করত কামাল।

তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মালিকের অবর্তমানে দোকান খুলে জাকারিয়া ও কামাল। সেদিন কাজের একপর্যায়ে উভয়ের ঝগড়া হয়। পরদিন হরতালের দিন দোকান বন্ধ থাকলেও জরুরি কথা আছে বলে জাকারিয়াকে দোকানে আসতে বলে কামাল। সকাল ৯টায় দোকানে এলে কামাল একটি মগভর্তি এসিড এনে জাকারিয়াকে চায়ের কথা বলে খেতে বলে। কিন্তু জাকারিয়া খেতে না চাইলে কামাল ক্ষিপ্ত হয়ে মগভর্তি এসিড জাকারিয়ার মুখে নিক্ষেপ করলে তার চোখ-মুখ-বুক-হাত ঝলসে যায়। এসিড নিক্ষেপের পরও জাকারিয়ার মৃত্যু না হওয়ায় মৃত্যু নিশ্চিত করতে কামাল দিয়াশলাই দিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লাথি দিয়ে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: কলেজশিক্ষককে খুন করে পালিয়ে যাওয়া স্বামীর মৃত্যুদণ্ড-স্ত্রীর যাবজ্জীবন

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় লোকজন ডবলমুরিং থানায় খবর দিলে গুরুতর আহত জাকারিয়াকে মৃত মনে করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে দেখা যায় তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। তখন তাকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা চারদিনের চিকিৎসায় জ্ঞান ফিরে। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় জাকারিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর জাকারিয়ার মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর সৌদি আরব চলে যান।

লে. কর্নেল ইউসুফ বলেন, এ ঘটনায় একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জাকারিয়ার বাবা ইউনুস মিয়া বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন। ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত মো. কামালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর কারাদণ্ড দেন। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় একটি এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানায় চুরি, ডাকাতি, নাশকতা, মাদক সংক্রান্ত মামলাসহ ৬টি মামলা রয়েছে।

এনইউএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!