৪০০০ কোটি টাকা মেরে গা ঢাকা, চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের টিপু ধরা খেল গুলশানে

৪ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি নুরজাহান গ্রুপের ডিরেক্টর টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশান থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নগরের খুলশী থানায় তাঁকে হস্তান্তর করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ঋণখেলাপি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি নুরজাহান গ্রুপের ডিরেক্টর টিপু সুলতানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কানাডায় টাকা পাচারকারী ধনকুবের জহির আহমেদ রতন এবং তাঁর ভাই ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন অর্থঋণ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান। এছাড়া রতনসহ তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের দায় রয়েছে।

আরও পড়ুন: নুরজাহান গ্রুপের ভেজাল তেল সরাতে হচ্ছে বাজার থেকে, জেলে যেতে হবে এমডি রতনকে

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর একই ব্যাংকের একই শাখা থেকে ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। বাকি পাঁচজন হলেন- জহিরের স্ত্রী মনোয়ারা প্রকাশ তাসমিন আহামেদ, ভাই টিপু সুলতান ও জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের এবং ফরহাদ মনোয়ার। তাঁদের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে এমডি জহির আহমদ রতন সবমিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫টি মামলা আছে। এ কারণে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাছাড়া বিভিন্ন মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও রতনের কোনো হদিস পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

আরো জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তা সুদ ও দণ্ড সুদসহ ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এ পাওনা আদায়ের জন্য ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন অর্থঋণ আদালত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড জুবলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ৪০ কোটি টাকা হতে পারে।

জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

রতনের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন কানাডায়। এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আরএস/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!