ঠিকাদারের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ সাংসদ—নিজে এসেই বন্ধ করালেন স্কুলের নির্মাণকাজ

নগরের পাঞ্জাবী লেনের পাহাড়তলী গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে চলছে ৬তলা ভবনের নির্মাণকাজ। রোববার (২৩ মে) সেখানে এসে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন সাংসদ দিদারুল আলমের এপিএস আলমগীর। সাংসদকে দিয়ে স্কুলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়নি— এমন অভিযোগে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন এপিএস আলমগীর।

এরপরও নির্মাণকাজ চললে সেখানে আসেন স্বয়ং সাংসদ দিদারুল আলম। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুর ২টায় এসেই নির্দেশ দিলেন— স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার। এপিএসের মতো কাজ বন্ধ রাখার অভিন্ন নির্দেশ দিলেও সাংসদের অভিযোগটা কিন্তু ভিন্ন। সাংসদ দিদারের অভিযোগ—নিম্নমানের পাথর দেওয়ায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি!

একাধিক সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, অর্ধনির্মিত ভবনটির নির্মাণকাজ সাংসদ দিদারুল আলম দিয়ে না করানোই তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলিফ শাদাফ ট্রেডিং। রোববার (২৩ মে) এপিএস আলমগীর স্কুল প্রাঙ্গণে এসে কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদারকে সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

এরপরও ঠিকাদার দেখা না করলে এবং এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে আরো ক্ষেপে যান সাংসদ দিদারুল আলম। মঙ্গলবার তিনি নিজেই এসে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় সাংসদের সঙ্গে এপিএস, নিরাপত্তা রক্ষী এবং খোরশেদ ও লোকমান নামে দুই ব্যক্তি ছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

কাজ বন্ধ করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে এপিএস আলমগীর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নির্মাণকাজের উদ্বোধন এমপিকে দিয়েই করানোর কথা। কিন্তু ঠিকাদার তা না করেই কাজ শুরু করে দেন। সাংসদ বারবার বলার পরও দেখা না করায় তিনি ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন।

তবে দেখা না করার বিষয়টি অস্বীকার করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এহসান চৌধুরী। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জরুরি কাজে দেশের বাইরে থাকায় আমি দেখা করতে পারিনি। দেশে ফিরেই সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে দেখা করেননি। এরপর এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে এমপি সাহেব নিজে এসেই কাজ বন্ধ করে দেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাংসদ দুপরে এসে নির্মাণকাজ বন্ধ করেন।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এমপিকে দিয়ে গত ৫ মার্চ স্কুলভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কথা থাকলেও তিনি আসেননি।

এদিকে নির্মাণকাজে শ্রমিকদের দায়িত্বে থাকা জহিরুল ইসলাম বলেন, সাংসদ এসে পাথরের মান খারাপ অভিযোগ এনে কাজ বন্ধ করতে এবং মালামাল যাতে বাইরে নিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুল কমিটির এক সদস্য বলেন, পাথরের মান খারাপ নাকি ভালো সেটা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। সাংসদ তো আর বিশেষজ্ঞ নন, তাহলে পরীক্ষা ছাড়াই তিনি কীভাবে পাথর খারাপ বললেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাংসদ দিদারুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাংসদের অধীনেই এসব কাজ হয়। সাংসদ দিয়ে উদ্বোধন না করিয়ে ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবনের কাজ শুরু করে দেন।

৫ মার্চ নির্মাণকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, উদ্বোধন করার তারিখ নির্ধারণ করবে ঠিকাদার, স্কুল কর্তৃপক্ষ নয়।

ঠিকাদারের সঙ্গে দেখা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদার এসেছিল বৃহস্পতিবার। আমি ব্যস্ত থাকায় দেখা হয়নি। এরপর সে আমার সঙ্গে আর দেখা করেনি।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!