চাঁদা না পেয়ে কাজীর দেউরিতে ছুরি মেরে যুবককে খুন করল ‘পিস্তল বাবু’

নগরের কাজীর দেউরি থেকে পলোগ্রাউন্ড— সবখানেই ত্রাসের রাজত্ব করেন কিশোর গ্যাং লিডার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু আহম্মেদ বাবু ওরফে পিস্তল বাবু। এই বিস্তৃত এলাকাজুড়ে রয়েছে তাঁর আধিপত্য ও প্রভাব।

এবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত পিস্তল বাবু ছুরি মেরে খুন করলেন মো. মঈনউদ্দিন (৩০) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে। পলোগ্রাউন্ড মাঠে সদ্য শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় স্টল বসানোকে কেন্দ্র করে তাকে খুন করেন পিস্তল বাবু।

নিহত মো. মঈনুদ্দিন চান্দগাঁও থানার আব্দুল মাবুদের ছেলে। এ ঘটনায় মো. মোবারক (২৭) নামে একজন আহত হয়েছেন। তিনি কাজীর দেউরি এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত ৩টায় নগরের কাজীর দেউড়ি ২ নম্বর গলির আব্দুর রাজ্জাক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ খুনির নাম আবু আহম্মেদ বাবু উল্লেখ করলেও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে তার প্রকৃত নাম ফয়সাল ইসলাম বাবু। তিনি কাজীর দেউরির ‘রফিকের’ ছোট ভাই। বাবুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। ছুরিকাঘাতের সময় বাবুর সঙ্গে তার কিশোর গ্যাংয়ের আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিল বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) আয়োজিত ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় মঈনুদ্দিন কাপড়ের স্টল বসাতে গেলে তার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আবু আহম্মেদ বাবু ওরফে পিস্তল বাবু। এটা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। মঈনুদ্দিন চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাত ৩টার দিকে মেলায় সামান্তা বোরকা হাউস নামের স্টল বসানোর বিষয়ে কথা আছে বলে মঈনুদ্দিনকে ডেকে নিয়ে যায় পিস্তল বাবু।

এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মঈনুদ্দিন ও মোবারককে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় পিস্তল বাবু। এ সময় পথচারীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মঈনুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত মোবারককে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

আরও পড়ুন: ‘এইচআর গ্রুপ’—১৪২ কোটি টাকা মেরে দিল রুবাইয়া অয়েলের তিন মালিক

অভিযোগ রয়েছে, কাজীর দেউরি থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং লিডার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু আহম্মেদ বাবু ওরফে পিস্তল বাবু। এই এলাকাজুড়ে তার রয়েছে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের বাহিনী। তাদের দিয়ে কাজীর দেউরি বাজার থেকে শুরু করে আউটার স্টেডিয়াম, শিশুপার্ক এবং রেডিসন ব্লু এলাকায় শত শত টংয়ের দোকান বসিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছেন কথিত এই সন্ত্রাসী।

শুধু তাই নয়, সিআরবির পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত এই কথিত সন্ত্রাসী পিস্তল বাবুর বিরুদ্ধে স্টেডিয়াম এলাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার কিশোর গ্যাংয়ে রয়েছে শতাধিক সদস্য। এসব কিশোর কাজীর দেউরি আউটার স্টেডিয়াম, কাজী বাড়ি, কাজীর দেউরি ২নং গলিতে মাদক সেবন করে ছিনতাই থেকে শুরু করে অসামাজিক কার্যকলাপে মত্ত থাকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাজীর দেউরি এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আড্ডায় মেতে উঠে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক সেবন করে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীদের অবিভাবকসহ এলাকাবাসী।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পলোগ্রাউন্ডে বাণিজ্য মেলায় কাপড়ের স্টল বসানোকে কেন্দ্র করে আবু আহম্মেদ বাবু ওরফে পিস্তল বাবুর সঙ্গে ভুক্তভোগীদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাদের ওপর অতর্কিত ছুরিকাঘাত করে পিস্তল বাবু।

পরে তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে ২৫নং ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। সেখানে মঈনুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অন্যজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাবুকে ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

এএইচ/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!