চট্টগ্রাম মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে হামলা—চাঁদাবাজি, পালের গোদার পর্দা ফাঁস

এর আগেও ঘটেছিল রক্তাক্ত হামলার ঘটনা। মাঝে কিছুটা বিরতি দিলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে ফের ঘটেছে হামলা ও খুনের হুমকি। আড়ালে থেকে এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরের প্রভাবশালী এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।

তবে এবার সেই পালের গোদার পর্দা ফাঁস হয়েছে। দলবলসহ তিনি ফেঁসেছেন মামলার জালে।

চাঁদা দাবি, খুনের উদ্দেশ্যে হামলাসহ সহিংসতার অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন চট্টগ্রাম অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ।

মামলায় বাকি আসামিরা হলেন— নগরের চকবাজার মুন্সি পুকুর পাড় এলাকার মেহেদী হাসান রাকিব ও মো. মিটু, চট্টগ্রাম মেডিকেল পূর্ব গেইট এলাকার সিটি মেডিকেল হলের অভিজিত সেন মিশু, সাতকানিয়ার মারফলা বাজার এলাকার শুভ মজুমদার, নগরের হামজারবাগ এলাকার রাকিবুল ইসলাম সেলিম ও আরিফ হোসেন, ভুজপুর লম্বাবিল এলাকার আরিফ উদ্দিন, পাঁচলাইশ মোহাম্মদপুর এলাকার আরাফাত হোসেন, চকবাজার এলাকার মো. সাহেদ আলী, মুরাদপুর রেলবিট এলাকার তানভীর হোসেন, বাকলিয়া এলাকার এনামুল হক মানিক, তানভীর মেহেদী মাসুদ ও সায়েদ বিন আব্দুল্লাহ নাহিদ। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়।

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান মামলার বাদি নুর মোহাম্মদ।

আরও পড়ুন : সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও নেই—বেসরকারির দাপট, জরুরি সেবায় জটিল পরিস্থিতিতে দুস্থরা

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির নির্দেশে ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ইয়াছিনকে মারধর করে আসামিরা। এ বিষয়ে জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে গেলে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

এসময় আসামিদের কয়েকজন মামলার বাদি নুর মোহাম্মদকে লোহার রড, বাটাম দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। চাঁদা না দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে না দেওয়াসহ নুর মোহাম্মদকে মেরে লাশ ঘুম করার হুমকি দেয় আসামিরা।

এরপর ৩ মার্চ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হোস্টেল রোডে আসামিরা মামলার বাদি ও অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ এবং অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ইয়াছিনের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নুর মোহাম্মদকে চড়-থাপ্পর মারা শুর করে। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক ইয়াছিনকে খুনের উদ্দেশ্যে ছুরি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এসময় নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা। একইসঙ্গে আসামিরা এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে না দেওয়াসহ অ্যাম্বুলেন্স সমিতি সংশ্লিষ্টদের খুন করা হবে বলেও হুমকি দেয় আসামিরা।

আসামিদের এমন হুমকি-ধমকিতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও মামলার বাদি নুর মোহাম্মদ। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে জানান বলেন, বছরখানেক আগেও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির অনুসারীরা এভাবে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটান। গত এক বছর কিছুটা ঝামেলামুক্ত গেলেও আবারো চাঁদাবাজিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন তারা।

এদিকে অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকদের ওপর দুদফা এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। চট্টগ্রাম অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি এ মানববন্ধন করে। এসময় অবিলম্বে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!