চট্টগ্রামে ৩ কারণে আগুন জ্বলছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আগুন জ্বলছে। হু হু করে বাড়ছে তেল, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম। আলোকিত চট্টগ্রামের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে— তিন কারণে অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডিও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট

এদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীন হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যয়ের খাত কাটছাট করেও কুলাতে পারছে না তারা। খরচ মেটাতে অনেকে বিক্রি করছেন সম্পদ, আবার অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন ঋণের জালে।

পাইকারি বাজারে তেলসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়ানো হলেও পর্যাপ্ত নজরদারি নেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের। সচেতন মহলের মতে, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বেড়েছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং গরম মসলার দাম আবার বেড়েছে। অথচ এসব পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল। নতুন করে ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় অস্থির দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বাড়তি। তাই বাজার চড়া। ডলার সংকেটর কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি খোলার অনুমতিও কম দিচ্ছে। এসব কারণে পাইকারি বাজারে বাড়ছে পণ্যের দাম।

কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ডিও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নতুন করে বেড়েছে তেলের দাম। তাদের মুখে মুখে প্রতিদিন বাড়ছে রান্নার প্রয়োজনীয় এই উপকরণটির।

খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতিমণ চিনির দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৭০ টাকায়। মসুর ডাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৯৩ টাকা, মটর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।

এছাড়া পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকর ৫০ টাকা এবং আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। হলুদ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় মরিচ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে ভোজ্যতেলের বাজারে। বর্তমান প্রতিমণ পাম তেলের দাম ৪ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহও আগে বিক্রি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৫০ টাকায়। এছাড়া সয়াবিনের মণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭শ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সব পণ্যে আগুন। আমরা কি করব? কোনো ব্যাংকে টাকা নেই। কিছুদিন আগে ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার কারণে এখনো ঋণপত্র (এলসি) খুলেনি। এখনতো ডলারের দাম কিছুটা কমার ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে চাইলেও পারছে না।তাহলে আমরা মাল আমদানি কীভাবে করব? এভাবে চলতে থাকলে সামনে পণ্যের দাম আরো বাড়বে।

এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়ছে। নগরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোল ময়দা কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা ও প্যাকেট ৭৫ টাকা, ১ লিটার তেলের বোতল ১৯০ টাকা, মসুর ডাল কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দুধ পাউডার ৬৪০ টাকা, চা পাতা ৪০০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকা, রসুন ১৩০ টাকা, আদা ২০০ টাকা এবং মুরগির ডিমের (ফার্ম) ডজন ১৪০ টাকা।

বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি ও ডলার সংকটের কারণে খাতুনগঞ্জে মনপ্রতি সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। এ কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে নতুন এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে তেলের দাম বাড়ছে। আবার ডিও ব্যসসায়ীদের মুখে মুখেও বাড়ছে তেলের দাম। ডিও ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট যুদ্ধের অজুহাতে ফোনে ফোনে তেলের দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন সময় এসব ডিও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণেে কথা বলা হলেও দৌরাত্ম্য কমেনি।

এছাড়া ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার দীর্ঘদিন ধরে অস্থির হলেও জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য বিভাগের তেমন কোনো নজরদারি নেই। নজরদারির অভাবে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন আলেকিত চট্টগ্রামকে বলেন, তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া। পণ্যের দাম বাড়লেও তাতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। মুলত সরকার ব্যবসায়ীদের নাড়াতে চায় না। ফলে তারা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাই পণ্যের দাম বৃদ্ধি রোধে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান জোরদার করার দাবি জানাই।

যোগাযোগ করা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করি। পাইকারি বাজারে যদি কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়, তাহলে আমরা সেখানে অভিযান চালাব।

সর্বশেষ কখন চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছেন— প্রশ্ন করা হলে তিনি স্মরণ করতে পারেননি।

আলেকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!