চট্টগ্রামে মেয়র রেজাউলের মুখে ড. ইউনূসের প্রশংসা, বিতর্কে জড়ালেন আ.লীগ নেতারা

এবার ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সদ্য প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। দলের কর্মসূচিতে গরহাজির নগর আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মুখে এমন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় বেশিরভাগ কর্মসূচিতে হাজির থাকেন না মেয়র রেজাউল। কিন্তু কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে তো অংশ নেওয়া উচিত ছিল। তিনি এতেও অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু নগরের ফাইভস্টার হোটেলে বড় বড় কোম্পানির অনুষ্ঠানে গিয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তার এমন কার্যকলাপ চট্টগ্রামের রাজনৈতিক কর্মীদের সম্মান ক্ষুণ্ন করছে।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে শোকাবহ আগস্টে দলের ৫ কর্মসূচিতে ছিলেন না মেয়র রেজাউল

গত ৩০ আগস্ট রবি আজিয়াটা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল বলেন, চট্টগ্রামের সন্তান ড. ইউনূস এ বাংলাদেশে প্রথম নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। সবদিক দিয়ে চট্টগ্রামই প্রথম। তাছাড়া ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা পাওয়ায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তিনি এমন প্রশংসা করেন। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বাসঘাতকতা করায় ড. ইউনূসের নিন্দা জানিয়েছেন, সেখানে একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা সম্পন্ন মেয়রের মুখে তার প্রশংসার বুলি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের সাধারণ আলোচনায় বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে (প্রধানমন্ত্রী) পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন দাতা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মাঝখানে একজন ডক্টর এসে ঢুকলেন। তারপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এসে বলল, দুর্নীতি হয়েছে। কী দুর্নীতি হয়েছে? এক পয়সাও দেয়নি। একটি টাকা দেয়নি, বলে দুর্নীতি হয়েছে। কী বিচিত্র। এরা মানুষের শত্রু।’

এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের কার্যকরী কমিটির সভায় ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ইদানিং বিভিন্ন সভায় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী ড. ইউনূসের সপক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। ড. ইউনূস যেভাবে দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, যেভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তা শুধু আমাদের দেশে নয় আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত সত্য। একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার মেয়র হয়ে তিনি একজন জাতীয় বেঈমানের প্রশংসা কেমনে করতে পারেলেন?’

তিনি এ সময় নগরবাসীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সদ্য প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গাড়িতে এবং বাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে বিশ্বাসঘাতক ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও প্রশংসা করায় জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান করা হচ্ছে বলে মনে করেন নগরবাসী।’

মেয়রের এ ধরনের দৃষ্টতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী পরিষদের সবার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। এর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বানও জানান হাসান মাহমুদ শমসের।

মেয়রের কর্মকাণ্ড নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এ কমিটি মানেন না এবং এটি অবৈধ কমিটি বলে উল্লেখ করেন। পরে এ বিষয়ে নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে তিনি আর ফেরেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া মঙ্গলবার কার্যকরী কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের দিকনির্দেশনায় প্রত্যেকটি থানা থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলন করার জন্য কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এসে এসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন। চলতি মাসের মধ্যে ইউনিট ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু দলের কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন না। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দলের কর্মসূচিতে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবসেও দেখা মেলেনি মেয়র রেজাউলের।

২১ ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দলীয় কর্মসূচিতে তাঁর অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মত হলেও তিনি ৭ মার্চও ঘটিয়েছেন একই কাণ্ড।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতেও ছিলেন অনুপস্থিত। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন না মেয়র রেজাউল। মুজিবনগর দিবসও ছিলেন অনুপস্থিত। ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেও দেখা মেলেনি দলের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের।

এছাড়া ৬ দফা দিবসের দলীয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে তাঁকে ছাড়াই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গর্বের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও ছিলেন না তিনি। শেখ হাসিনার কারাবরণ দিবসেও অনুপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাওয়া এ মেয়র।

শোকাবহ আগস্টের দলীয় কর্মসূচি কেটেছে দলের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই। ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচিতেও তাঁর দেখা মেলেনি। শুধু তাই নয়, ৫ আগস্ট নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি মেয়র রেজাউলকে। নগর আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দেখা যায়নি ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীর দলীয় কর্মসূচিতেও।

আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার হুমকিতে উত্তাল চট্টগ্রাম, আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নেই মেয়র রেজাউল

১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় রেজাউলকে দেখা যায়নি।

এছাড়া ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দলের কর্মসূচিতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচিতে সবার শেষে এসে বক্তব্য দেওয়া মাত্রই আবার সভাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!