চট্টগ্রামে পুলিশি অভিযানেই ‘মুক্ত’ স্বর্ণ ব্যবসায়ী—ফাঁসানোর ছকে ২ নারী

চট্টগ্রামে অপহৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জিত কুমার রায় (৫০) মুক্ত হয়েছেন। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন অপহরণে জড়িত দুনারীসহ ৫ জন। সঞ্জিতকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার পর বেরিয়ে আসে তাঁকে ফাঁসানোর পুরো ছক।

নগরের অলংকার ও হালিশহর পানিরকল এলাকায় শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ অপহরণকারীকে। তারা হলেন— মো. আমিনুল ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম, মো. সেলিম, আয়েশা আক্তার ও রেহেনা আক্তার মীম।

অভিযানে তাদের হেফাজত থেকে অপহৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জিত কুমার রায়কে (৫০) মুক্ত করে হালিশহর থানা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, সঞ্জিত কুমার রায় পাহাড়তলীর অলংকার শপিং কমপ্লেক্সে চাঁদনী জুয়েলার্সের মালিক। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুমহিলা দোকানে এসে স্বর্ণের দাম জানতে চান এবং কিছু স্বর্ণালংকার বিক্রির কথা বলে মোবাইল নম্বর নিয়ে যান। পরদিন শনিবার (২৯ অক্টোবর) সঞ্জিতকে ফোন করে পরিচয় দিয়ে তাদের ব্যবহারের কিছু স্বর্ণালংকার আর্থিক সংকটের জন্য বিক্রি করবে বলে জানায়। তিনি স্বর্ণালংকারগুলো কিনতে সম্মত হলে তারা তাকে তা দেখার জন্য হালিশহর থানাধীন নয়াবাজার মোড়ে আসতে বলে।

সঞ্জিত কুমার পাশের দোকান মালিক শংকর দেবকে স্বর্ণ কেনার জন্য হালিশহর থানাধীন নয়াবাজার মোড়ে যাবে জানিয়ে দোকান বন্ধ করে বের হয়ে যান। সেখানে গিয়ে সঞ্জিত মহিলাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে তারা তাকে নয়াবাজার মোড়ে তায়েফ হোটেলের বিপরীত পাশে রাস্তার ওপর থাকা অটোরিকশার পাশে যাওয়ার জন্য বলে। তিনি তাদের কথামতো অজ্ঞাত অটোরিকশার সামনে গেলে ভেতরে থাকা দুজন তাকে চাকু ধরে অটোরিকশার উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলা রুমে তাকে আটকে রাখে।

পরে দুজন মহিলা রুমে প্রবেশ করলে তাদের দেখেই তিনি চিনতে পারেন। তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় মহিলাদের সঙ্গে ভিকটিমের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে অপহরণকারীরা তাকে কিল-ঘুষি মেরে খুন করার হুমকি দেয়।

একপর্যায়ে নিজের প্রাণ ও মানসম্মান বাঁচাতে সঞ্জিত তার পাশের ব্যবসায়ী শংকর দেবকে ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে ১ লাখ ২০ হাজার নিয়ে অলংকার শপিং কমপ্লেক্সের নিচে আসতে বলেন। এ সময় তিনি তার নম্বর থেকে একজন লোক ফোন দিলে ওই টাকা তাকে দিতে বলেন। কথা শুনে শংকর দেবের সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি সঞ্জিতের ভাইকে ফোন করে জানান। এরপর শংকর ও তার ভাই হালিশহর থানায় এসে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত পুলিশকে জানায়।

যোগাযোগ করা হলে হালিশহরর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। প্রথমে পাহাড়তলী থানাধীন অলংকার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা নিতে আসা মো. আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হালিশহর থানাধীন ১ নং পানিরকল এলাকা থেকে অপর চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী সঞ্জিত কুমার রায় এবং ঘটনায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এনইউএস/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!