চট্টগ্রামে তেলচুরির ঘটনায় চোরকে বাঁচাতে অন্যরকম ‘নাটক’ সিটি কর্পোরেশনের

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাগরিকা পাম্পের তেলচুরির ঘটনায় মামলা নিয়ে শুরু হয়েছে ধুম্রজাল। ঘটনার মূল আসামিকে বাঁচাতে চলছে তোড়জোড়।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে পাহাড়তলীর সিটি কর্পোরেশনের সাগরিকা পেট্রোল পাম্পে তেলচুরির সময় জালাল আহম্মদ (৪৮) নামের সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী এক ভ্যানচালককে গ্রেপ্তার করেন দায়িত্বরত আনসার সদস্য নূর নবী। এ সময় ১০০ লিটার ডিজেল জব্দ করা হয়।

এ ঘটনার ১২ দিন পর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাদি হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশি তদন্ত শেষে সেই ভ্যানচালককে কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরে সেই ভ্যানচালক জামিনে বেরিয়ে আসেন।

কিন্তু মামলার এজাহারে দেখা গেছে, বাদি কামাল উদ্দিন হলেও এজাহারের নিচে নিবেদকের স্থানে নাম ছিল একেএম মামুনুর রশিদের। কিন্তু সেই স্থানে স্বাক্ষর করেন সিটি কর্পোরেশনের প্রহরী কাম নিরাপত্তা পরিদর্শক কামাল উদ্দিন। সেই এজাহারে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) স্বাক্ষরও ছিল।

এদিকে মামলার পর সিটি কর্পোরেশন একটি তদন্ত টিম গঠন করে ছয়দিন অনুসন্ধান চালায়। তদন্তে মো. নেজাম উদ্দিন নামের এক পাম্প অপারেটরকে শনাক্ত করে পাহাড়তলী থানায় একটি সম্পূরক এজাহার দায়ের করা হয়।

গত ৬ সেপ্টেস্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো. নেজাম উদ্দিনকে তেল চুরির সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে মামলায় আসামি করতে এই এজাহার দেন।

সেই এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সিটি কর্পোরেশনের সাগরিকা প্রকৌশল বিভাগ (যান্ত্রিক) শাখা হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, অভিযুক্ত নেজাম উদ্দিন তেলচুরির সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু এ সময় তার ডিউটি ছিল না।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এমন কোনো চিঠি আমি পুলিশকে দিয়েছি কিনা আমার জানা নেই। এই চিঠি হয়তো আমার স্বাক্ষর নকল করে কেউ দিয়েছে বলেই তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পরে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন করে তার স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নেজাম উদ্দিন চুরির সঙ্গে জড়িত, এমন কোনো প্রমাণ হাতে আছে কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রমাণ আমার হাতে নেই।’ এ সময় তিনি সাগরিকা যান্ত্রিক বিভাগের সিকিউরিটি ইনচার্জ কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘চুরির ঘটনায় পাম্প অপারেটর নেজাম উদ্দিনের জড়িত থাকার বিষয় পাওয়া গেছে।’

কোন প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে কোনো প্রমাণ নেই। আপনি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।’

পাম্প অপারেটর নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘যেদিন তেল চুরির ঘটনা হয়েছে তার দু’ঘণ্টা আগে আমি ডিউটি শেষ করে কর্মস্থল ত্যাগ করি। কিন্তু এখন আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চুরির মামলায় অভিযুক্ত করার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে। যদি আমি জড়িত থাকতাম, ঘটনার দিন আমাকে গ্রেপ্তার করলো না কেন?’

এ বিষয়ে চুরির মামলার সাক্ষী নিরাপত্তা পরিদর্শক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। এ বিষয়ে কিছু জানা নেই।’

তাহলে মামলার সাক্ষী কিভাবে হলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে সাক্ষী বানানো হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছুই বলতে পাবর না।’

মামলার এজাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলীর ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে ভুল স্বাক্ষর হয়তো ভুলবশত হয়েছে। পরে আবার ঠিকও করা হয়েছে কোর্টে।’

সম্পূরক এজাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। তা তদন্তাধীন আছে।’

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!