১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন যাবে ঝিনুকের শহরে, চট্টগ্রামের মানুষরাই বঞ্চিত

ঝিনুকের শহর কক্সবাজারে আগামী ১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) থেকে বেজে ওঠবে বাণিজ্যিক ট্রেনের হুইসেল। তবে পর্যটন শহরে চট্টগ্রামবাসীর ট্রেন ভ্রমণে রয়েছে ধোঁয়াশা। কারণ চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকিট বিক্রির কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি। আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের মানুষ।

জানা যায়, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে কোরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক কোচে চলবে বিরতিহীন ৭৮০ আসনের বাণিজ্যিক ট্রেন। ইতিমধ্যে ট্রেন চলাচলের জন্য পূর্বাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে রেলওয়ে চিফ অপারেটিং বিভাগ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি বিরতিহীন বাণিজ্যিক ট্রেন চালুর উদ্যাগ নেয় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২১ নভেম্বর) রেলওয়ে চিফ অপারেটিং বিভাগের পক্ষে এসিওপিএস (পি) পূর্ব মো. আবু বক্কর ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতির আদেশ দেন।

জানা গেছে, আধুনিক কোরিয়ান কোচের ৭৮০ আসনের ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। ভোর ৪টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। সেই হিসাবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার লাইনে গড়ে ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলবে এই ট্রেন।

এদিকে ট্রেন চলাচলের দশ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও কারিগরি কাজ শেষ না হওয়ায় সেটি হবে না বলে জানায় রেলওয়ে। এছাড়া প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেনে চট্টগ্রামবাসী ভ্রমণেও কোনোরকম নির্দেশনা এখনও আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট কাটা যাবে কিনা তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। বিরতিহীন ট্রেনটি ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ২০ মিনিট দাঁড়াবে। তবে কোটা সুবিধা বা স্টেশনে টিকিট রাখার সিদ্ধান্ত হয়নি।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা আরমান নামের একজন বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেন যাবে। অথচ আমাদের জন্য কোনো কোটা বা টিকিট সুবিধা রাখা হয়নি। এটি আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়। আশা করি দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলে চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকিট রাখা হবে।

জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ১ জোড়া ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। ফলে বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষের কাজ চলছে। নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি চলাচলের জন্য আরও ৪ জোড়া সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়া চলছে জনবল বাছাইসহ সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম। তবে আধুনিক সিগনালিং কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পাইলটিং পদ্ধতিতে (হাতে সিগনাল) ট্রেন চালাতে হবে।

এ বিষয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমাদের কাজ মোটামুটি শেষ। রেললাইনকে একজোড়া বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের মতো উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। সাতকানিয়া অংশে আরও ২ জোড়া সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। চলমান কাজ ২৮ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করি।

যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. সাইফুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি চলছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকিট পাওয়া যাবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সভায় এই বিষয়ে কথা উঠলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জাফর চৌধুরী বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন চলাচলে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকিট দেওয়ার কোনো নির্দেশনা আসেনি।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!