খরচ কম—লাভ বেশি, সীতাকুণ্ডে খুশি মাল্টা চাষি

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে বেশ উপকারী মাল্টা। ছোট-বড় সবার এই ফল বেশ পছন্দ। সীতাকুণ্ডে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাল্টা চাষ।

সীতাকুণ্ডের অনেক কৃষক ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে। তাঁরা স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। প্রতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকরা মাল্টা বিক্রি করে আয় করছেন লাখ টাকা। দক্ষিণ বাঁশবাড়িয়া পাহাড়ে মাল্টার প্রথম চাষেই ‘বাজিমাত’ করেছেন একই ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে প্রবাসী মো. জাহাঙ্গীর আলম।

পুষ্টিবিদদের মতে, মাল্টা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই ফলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা দৃষ্টিশক্তির জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত মাল্টা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শুধু তাই নয়; টনসিলের সমস্যা, নাক বন্ধ থাকা, গলা-ব্যাথা, সর্দি, মাথা-ব্যাথা এবং ঠাণ্ডাজনিত সব রোগ দূর করে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের ঢালে ও পরিত্যক্ত জায়গায় স্থানীয় কৃষকরা প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টার চাষ করেছেন। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। আর কিছুদিন পর পাকা মাল্টা সংগ্রহ করা শুরু হবে।

জানতে চাইলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এবার প্রথম মাল্টার চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছি। দুবাই থেকে আসার পর প্রথমে আম, লিচু, আপেল ও কুলের চাষ করি। কিন্তু এসব ফল চাষে খরচ অনেক বেশি। পরে বাঁশবাড়িয়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনছুর ৪ বছর আগে আমাকে মাল্টা চাষের পরামর্শ দেন। এরপর প্রথমবারের মতো প্রায় ৮০ শতক জায়গায় পাহাড়ের ঢালে ১০০ মাল্টার চারা রোপণ করি। সেসময় বিষমুক্ত মাল্টা চাষে খরচ হয়েছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, প্রথমবার মাল্টা উৎপাদন হয়েছে দেড়শ কেজির বেশি। তখন বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়ার পরও অন্তত ৩৫ হাজার টাকার মতো মাল্টা বিক্রি করেছি বিভিন্ন হাট-বাজারে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে মাল্টার উৎপাদন হয়েছে প্রায় দেড় টন। তখন ২০০ টাকা হিসেবে উপজেলার বাড়বকুণ্ড, শুকলাল হাট, কুমিরা, ভাটিয়ারিসহ বিভিন্ন স্থানে মাল্টা বিক্রি করি ১ লাখ ৮০ টাকার।

জাহাঙ্গীর বলেন, চলতি মৌসুমে আগের চেয়ে মাল্টার উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। এবার বাজারদর ভালো থাকলে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। আর কিছুদিন পর পাকা মাল্টা সংগ্রহ শুরু হবে।

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেল লিটারে কমল ৫ টাকা, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

তিনি আরও বলেন, মাল্টা চাষে তেমন খরচ নেই। কিন্তু অন্যান্য ফল চাষে খরচ বেশি। তবে এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় প্রথম অবস্থায় সমস্যায় পড়লেও মাল্টা বাগানের পাশে আমার পুকুর থাকায় সেচ নিয়ে তেমন ভাবতে হয়নি। শুধু ঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা করতে পারলেই মাল্টার উৎপাদন ভালো হয়।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনছুর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পাহাড়ি মাটিতে তেমন সার লাগে না। শুধু নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ফল লাগানো থেকে শুরু করে মাল্টা উৎপাদনের শেষ পর্যন্ত চাষি মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গেই ছিলাম। তাকে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবরকম কারিগরি সহায়তা করা হয়েছে। মাল্টা ফল দিন দিন জনপ্রিয় একটি ফল হিসেবে পরিচিত লাভ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০ জন কৃষক উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাল্টা চাষ করেছেন। স্বাস্থ্যকর ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ মাল্টা চাষে এখন অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকরা মাল্টা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করছেন।

এসআর/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!