‘ক্ষমতাধর’ পাপ্পির সঙ্গে ব্যবসা করেই ফেঁসে গেছেন ক্যাপ্টেন হাফিজুর, অস্ত্রের ভয়ও দেখান

মনছুর আলম পাপ্পি, নিজেকে পরিচয় দেন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। প্রশাসনের উপরমহলে ভালো যোগাযোগও আছে তাঁর। আর এই ক্ষমতার দাপটে অনেককে তটস্থ রাখার অভিযোগ আছে পাপ্পির বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট আমরিন এন্ড ব্রাদার্সের মালিক মনছুর আলম পাপ্পির সঙ্গে দুবছরের জন্য বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ভাড়ার চুক্তিপত্র করেন পিএসপি মেরিন সার্ভিসের মালিক ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান। কিন্তু চুক্তিপত্রের কোনো শর্ত না মেনে অবসরপ্রাপ্ত এ ব্যবসায়ীর তিলে তিলে গড়া ড্রেজার, বাল্কহেডসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম আত্মসাতের চেষ্টা করছেন পাপপি।

কেএম হাফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে বালুর চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসায় মন্দা প্রভাব পরে। তাছাড়া অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এসময় ব্যবসা রান করার জন্য আমার কাছে রক্ষিত এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার), এমবি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুষঙ্গিক
ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি করি পাপ্পির সঙ্গে।

তিনি বলেন, চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদী থেকে লোডিং করে পূর্ব কালুরঘাট, পশ্চিম কালুরঘাট, সিএন্ডবি, নতুন ব্রিজ, ১২ নম্বর, ভেল্লাপাড়া ও পটিয়া সংলগ্ন জায়গায় বালি আনলোডিং হবে। এতে প্রাথমিকভাবে নতুন ব্রিজের জন্য দৈনিক ২৫ হাজার ঘনফুট বালি সরবরাহ করার কথা উল্লেখ করে প্রতি ঘনফুট বালির জন্য দুই টাকা ৩০ পয়সা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্যান্য সাইডে চলমান দর ও দূরত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। তাছাড়া শর্তভঙ্গের কারণে চুক্তিপত্র বাতিল করার জন্য এক মাস আগে জানিয়ে যেকোনো পক্ষ তা বাতিল করতে পারবে।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ৮ লাখ টাকা যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ পরবর্তী সময়ে খরচ সমন্বয় করা হবে। এরপর একই বছরের ৭ অক্টোবর এমভি মরিয়ম নামে আরেকটি আনলোডিং ড্রেজার পাইপসহ ১ টাকা মূল্যে ভাড়া চুক্তি হয়। সর্বমোট ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৪০ ফুটের ৯৮টি পাইপ তাকে দেওয়া হয়।

ক্যাপ্টেন কে এম হাফিজুর রহমান আরও বলেন, চুক্তিপত্র অনুযায়ী পাপ্পি কোনো শর্তই মানেননি। এক মাস পর থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তিনি চার মাস পর কাজ শুরু করেন। দুটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। আমাদের সাথে চুক্তি থাকলেও তিনি কোনো ধরনের পেমেন্ট আমাদের করেননি। তাছাড়া একটি বাল্কহেড ফেলে রেখে নষ্ট করে ফেলেন। গত ৯ মে পাঁচটি ইকুইপমেন্টের মধ্যে তিনটি ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠাই। কিন্তু এতে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

তিনি অভিযোগ করেন, এসব বিষয় নিয়ে ব্যাবসায়িক বৈঠকে বসলে বিভিন্ন সময় পাপ্পি তার সহচরদের বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য অস্ত্র, গোলা বারুদ গাড়িতে লোড কর।’ এসব বলে ভীতি সঞ্চারসহ হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এসবে আমি বিচলিত হইনি।

তিনি আরও বলেন, পাপ্পির এমন কর্মকাণ্ডের কারণে চলতি বছরের ৯ জুন বাকলিয়া থানায় তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেদুল ইসলাম বরাবর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। কিন্তু বোয়ালখালীর স্থানীয় মন্ত্রী মফিজুর রহমানের অনুরোধে তিনি জিডির আবেদন গ্রহণ করেননি। পরে এ বিষয়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মো. তানভীর বরাবর অভিযোগ করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘চুক্তিনামা বাদ দিয়ে মালিকানাপত্র করে নিতে।’

তিনি আরও বলেন, এরপর ১৭ জুলাই বাকলিয়া থানায় আবারও জিডি করি। গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বাকলিয়া থানাকে আদেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে রোববার (২৮ আগস্ট) আদালত বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আজ সোমবার (২৯ আগস্ট) এ বিষয়ে শুনানি করবেন আদালত।

আরএস/এসআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!