কালোবাজারির নিরাপদ জোন ‘শিকলবাহা’—৭ পয়েন্টে আসে জাহাজের চোরাই পণ্য

জাহাজের পণ্য চোরাকারবারিদের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে কর্ণফুলীর শিকলবাহা। নদীকেন্দ্রিক সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এখানে ৭ পয়েন্টে গভীরে রাতে আসে চোরাই পণ্য। পণ্যগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির আমদানি স্ক্র্যাপ, ডিজেল, লোহা, সার, গম, চিনি, কয়লা, ভুট্টা, সয়াবিনসহ নানা ভোগ্যপণ্য রয়েছে।

এদিকে জাহাজে চুরির সঙ্গে শুধু চোরাকারবারি, মাস্টার, সুপারভাইজার, লস্কর জড়িত নন; আড়ালে রয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাও। ইতোমধ্যে এ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শিকলবাহার অনেকেই। নৌ পুলিশ ও শিকলবাহা ফাঁড়ি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের।

তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাসোয়ারা দিয়েই নদীপথে চোরাইপণ্যের ব্যবসা করছেন অনেকেই। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নৌ পুলিশের দাবি, প্রশাসনের যোগসাজশে জলে কোনো ক্রাইম নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিকলবাহায় চোরাইকাজে জড়িত ৪-৫টি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এ নিয়ে চোরাই পণ্য লোড-আনলোডে তাদের মধ্যে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। এতে বাড়ছে সংঘর্ষের শঙ্কাও।

কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন ইউনিয়ন শিকলবাহা। যার এক পাশে কর্ণফুলী নদী, অন্য পাশে শিকলবাহা-ভেল্লাপাড়া শাখা খাল। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ পাড়ের নতুন ব্রিজের নিচ, শিকলবাহার তাতিয়া পুকুর পাড়, শিকলবাহা ব্লকের পাড়, ভেল্লাপাড়া ব্রিজের নিচ, শিকলবাহা খাল সংলগ্ন তিনটি ডকইয়র্ক জেটিসহ সাত পয়েন্টে প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকার চোরাই মালামাল আনলোডিং হয়।

কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত নোঙর করা আমদানি জাহাজ থেকে মূলত কালোবাজারিরা এসব মালামাল নামিয়ে থাকেন। আর এসব অবৈধ মালামালকে কেন্দ্র করে নদীপাড়ে গড়ে ওঠেছে প্রায় অর্ধশত লোহার স্ক্র্যাপ ও তেলের দোকান। যাদের নেই কোনো লাইসেন্স।

মূলত এলাকার প্রভাবশালী গুটিকয়েক নেতার ছত্রছায়ায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নমনীয়তায় নদীতে চোরাকারবারিদের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশেষ নেটওয়ার্ক, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

শিকলবাহা মাস্টার হাটের সজীব ও কালারপুলের সাগর অভিযোগ করেন, রাতে কিংবা সন্ধ্যার আঁধারে ঘাটে ঘাটে চোরাই মালামাল নামালেও ফাঁড়ি পুলিশের কোনো জোরালো ভূমিকা দেখি না। বরং পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কিছু ক্যাশিয়ার মাসোহারা নেয় বলে শুনতে পাই।

যোগাযোগ করা হলে সদরঘাট নৌ থানার ওসি এবিএম মিজানুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমদানি পণ্যের চুরি বন্ধে কর্ণফুলী নদীতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যারা আগে থানার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দিত, তাদের নৌ-থানা এরিয়ায় কঠোরভাবে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। এমনকি কিছুদিন আগেও রাত আড়াইটার দিকে জাহাজ এমভি টিটু ১৬ জাহাজ থেকে স্ক্যাপ চুরি করার সময় ৭ জনকে হাতেনাতে আটক করে নৌ পুলিশের টহলদল। চুরির ঘটনায় জড়িত স্বয়ং জাহাজের মাস্টার, সুকানীসহ লস্কর।

একই প্রসঙ্গে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল উদ্দিন বলেন, নদীতে চোরাই পণ্য উঠানামার ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা দেখার দায়িত্ব নৌ পুলিশের, ফাঁড়ি পুলিশের নয়। তবুও শিকলবাহার কোনো ঘাটে যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলে থাকে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিবো।

চট্টগ্রাম জেলার আরও খবর পড়ুন

 

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!