পুলিশ সুপার—ওসি পরিচয়ে প্রতারণা করতেন মুরগি ব্যবসায়ী, ধরল র‍্যাব

বেলাল হোসেন (৩১) আগে মুরগি ব্যবসায়ী ছিলেন। অভাব-অনটনের সংসার ছেড়ে বিলাসী জীবন কাটাতে রাতারাতি বনে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা! সে নিজেকে কখনো থানার ওসি, কখনো সার্কেল এসপি বা এএসপি, আবার কখনও পরিচয় দিতেন র্যাব ও বিজিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দুবছর ধরে এভাবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

বুধবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে সহযোগীসহ র্যাব-৭ এর হাতে গ্রেপ্তার হন প্রতারক বেলাল।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।

গ্রেপ্তার বেলাল ফটিকছড়ির নাজিরহাট বক্তপুর এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। তার সহযোগী মো. ওসমান (৫৩) ভূজপুর থানার পশ্চিম সুয়াবিল এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে।

র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় ভিকটিম খোরশেদুল আলমের ফোনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে হুমকি ও ভিকটিমের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে জানিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। ভিকটিম ওইদিন রাতেই ২০ হাজার ৪০০ টাকা তার বিকাশ নাম্বারে পাঠান। এর পরদিন থানার ওসি সেজে আবার তার কাছ থেকে টাকা দাবি করলে ওইদিন ৩ হাজার টাকা টাকা বিকাশে পাঠান। একইদিন সার্কেল এএসপি সেজে পুনরায় ভয়-ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে ভিকটিম ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা বিকাশ করেন। এরপর প্রতারক বেলাল এসপি সেজে ভিকটিমের বিভিন্ন খোঁজ-খবর নেন। একইভাবে প্রতারক ভিকটিমের কাছ থেকে মোট ৫৩ হাজার ৪০ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এদিকে প্রতারক বেলাল র্যাব পরিচয়ে পুনরায় ফোন করে। মামলাটি বর্তমানে র্যাবের কাছে আসছে জানিয়ে পুনরায় টাকা দাবি করলে ভিকটিমের সন্দেহ হয়।

আরও পড়ুন: বড় ভাইয়ের পর ফাঁসিতে ঝুলল কলেজছাত্র ছোট ভাইও, নেপথ্যে ‘প্রেম’

প্রতারক বেলাল ২০২১ সালের মে মাসে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তার প্রতারণা শুরু হয়। এরপর সে থানার ওসি সেজে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দফাদারের কাছ থেকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদ প্রার্থীদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। এরপর তাদের নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করে। এছাড়া রাউজানে একটি বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাচ্চার বাবার নাম্বার সংগ্রহ করে পোস্টমর্টেম ঝামেলা সমাধান করার কথা বলে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে সে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, প্রতারক বেলাল একসময় মুরগির ব্যবসায়ী ছিলেন। নিজের বিত্ত বৈভব জীবন ধারণ করতে রাতারাতি বনে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কখনো ওসি, কখনো এসপি, আবার কখনো র্যাব ও বিজিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, এমনকি তার কাছ থেকে মৃত মানুষও রক্ষা পায়নি। পোস্টমর্টেম জটিলতা সমাধানের কথা বলেও সে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে ভিকটিমদের মামলার কথা বলে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে সময় নিলে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতো। এ ঘটনার সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এএইচ/এসআই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!