সিটি করপোরেশনের সোয়া কোটি টাকার ওষুধ গিলেও উড়ছে মশা

চট্টগ্রামে 'ডেঙ্গুর মরণকামড়'

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) শত দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম শেষ পর্যায়ে। ক্রাশ প্রোগ্রামে ইতিমধ্যে ছিটানো হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ওষুধ। এছাড়া মশার আবাসস্থল খুঁজতে উড়ানো হয়েছিল ড্রোনও। কিন্তু এতসবের পরও কমছে না মশার উপদ্রব। উল্টো এডিস মশার কামড়ে প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে প্রতিদিন ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও। সবমিলিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে।

জানা যায়, এডিস মশার লার্ভা নিধনে চলতি বছরের ২২ জুন থেকে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম ও এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে ৬০টি আবাসিক এলাকায় ড্রোন ব্যবহার শুরু করে চসিক। কিন্তু এতকিছুর পর মিলেনি কাঙ্ক্ষিত সুফল।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭২ জন রোগী। এদের মধ্যে শিশু ২৫ জন, নারী ২৫ জন এবং পুরুষ ২২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৬ জনের। শুধু চলতি সেপ্টেম্বরেই শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ জন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু, মৃত্যু বেশি নারী-শিশুর

চসিক বলছে, প্রাইমারি অবস্থায় হটস্পট এলাকাগুলো ছিল কাট্টলী, পাহাড়তলী, পাঁচলাইশ, দক্ষিণ আগ্রাবাদ ও সদরঘাট। পরবর্তীতে উত্তর আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মাদারবাড়ি, উত্তর কাট্টলীসহ বাকলিয়ার কিছু অংশ যুক্ত হয়।

এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে চসিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসী। নগরবাসীর অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই মশার জন্য থাকা যায় না। এছাড়া সব এলাকায় মশার ওষুধ ছেটানো হচ্ছে না বলে জানান অনেকে।

হালিশহরের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিল্ডিংয়ের আশপাশের ড্রেনে মশা অনেক বেশি। কিন্তু চসিকের কাউকে কখনও এসব ড্রেনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।

এনায়েতবাজার এলাকার বাসিন্দা পূজা ঘোষ বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে চসিক নানা উদ্যোগের কথা বলে। কিন্তু এসব উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটি দেখার বিষয়। আমাদের পাড়ায় বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে৷ কিন্তু ঠিকমতো মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। একদিন এলে পরে আর খবর নেই।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করার পর জনগণ সুফল পেয়েছে কিনা সেটি জানি না। তবে আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। যদি এতে সুফল না আসে তাহলে পদ্ধতির পরিবর্তন আনব।।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় ১০০ জনের ডেডিকেটেড টিমকে ১০টি পয়েন্টে ভাগ করে নির্বাচিত ১০টি পয়েন্টে কাজ করানো হয়। সেটি সিটি করপোরেশন আওয়তাধীন ওয়ার্ড, হাসপাতাল ও জলাবদ্ধ এলাকা হতে পারে।

ড্রোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলন, ড্রোন মূলত যেখানে আমরা পায়ে হেঁটে যেতে পারি না ওই স্পটগুলো দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে কম সময়ে অনেক বেশি অবজারভেশন করা যায়। যেহেতু এখন বৃষ্টি নেই, রোদ আছে সেজন্য ছাদে পানি জমার কথা নয়। তাই আমাদের ড্রোন কার্যক্রম আপাতত বন্ধ।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৫০ মৃত্যু, লাফিয়ে বাড়ছে রোগী—অসহায় সিটি করপোরেশন

ক্রাশ প্রোগ্রামের পরও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়টা আলাদা। ডেঙ্গু নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন আছে৷ ডেঙ্গু কেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এসেও থামছে না। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষ মুহূর্তে মৃদু শীত আসার কথা। কিন্তু আমরা এখনও দেখছি প্রায় থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বায়ুমণ্ডলের ৭০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা হলো এডিস মশা প্রজননের জন্য উপযোগী আবহাওয়া। এখনও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রামে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম নিয়মিত চলবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা প্রতিদিন যেসব জায়গায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি পাচ্ছি সেসব তথ্য সিটি করপোরেশনে পাঠাচ্ছি। তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিদিন ওষুধ ছিটাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!