উপাচার্যের পদত্যাগ ইস্যুতে হঠাৎ উত্তপ্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন বছরের শুরুতে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে উপাচার্য শিরীণ আখতারের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। অপরদিকে সেশনজট কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

গত কয়েকদিন ধরে দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আগামীতে বর্তমান ভিসির দুর্নীতি নিয়ে প্রদর্শনীসহ আন্দোলন আরও জোরদার এবং উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এছাড়া আগামী বুধবার (২৪ জানুয়ারি) আয়োজিত বৈঠকে সমাধান না হলে আরও বৃহৎ আন্দোলনের কথা জানিয়েছে ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপাচার্যের বিরুদ্ধে অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে বাংলা ও আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি। কিন্তু সমিতির আন্দোলনের মধ্যেই আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। এরপর উপাচার্য ও সহউপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এবং পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক সমিতি।

নতুন বছরের শুরুতে আবারও গতি আসে সেই আন্দোলনে। উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সভা-গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষকরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন।

আরও পড়ুন : ২ মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি 

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শফিউল আজম বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে এগিয়ে নিতে দিন-রাত কাজ করছি তখন ভিসি অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশাসন চালাচ্ছেন। তিনজন মৃত ব্যক্তির ইশারায় সব হচ্ছে। অযোগ্যদের শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। এটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় যে যেনতেন যোগ্যতার লোকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবেন। অযোগ্য শিক্ষক কীভাবে ভালো ছাত্র তৈরি করবেন। বর্তমান ভিসির মেয়াদে বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম নেই।

একই বিষয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার জায়গা। আমরা এখানে পড়াশোনার ভেতর থাকতে চাই। দুর্নীতি ও অনিয়মের খবরে আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। আমি যৌক্তিক কারণে ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি। যতদিন এই ভিসির পদত্যাগ করবেন না ততদিনে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন চলবে। আমরা সভা ও গণসংযোগের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছি। আগামীতে দুর্নীতি প্রদর্শনীসহ আরও বৃহৎ আকারে আন্দোলন করা হবে।

এদিকে মার্চের মধ্যে বর্তমান ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ না হলে বড় কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, চবি ফিশারিজ বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। সেখানে মাত্র তিনজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। এ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে চলছে তোড়জোড়। এছাড়া ৮ বছর আগে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্স বিভাগ চালু হলেও এখনও কোনো শিক্ষার্থী পাস করে বের হতে পারেনি। একাডেমিক জট নিরসন ও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

১৭ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করেন তারা। পরদিন প্রো-ভিসি অধ্যাপক বেনু দে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সেশনজট কমিয়ে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, মার্চের মধ্যে বর্তমান ব্যাচ শেষ করা এবং শিক্ষক নিয়োগের আশ্বাস দেন। আগামী বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিভাগের সভাপতি মো. আবুল মনছুরের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে প্রো-ভিসি অধ্যাপক বেনু দে’র। বৈঠকে সমাধান না হলে আরও বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মো. শফিউল্লাহ বলেন, আমাদের বয়স এখন ২৭ চলছে। অনেকের ২৮-২৯ এর কোটায়। এখন কী করব বুঝছি না। প্রো-ভিসি ও চেয়ারম্যান স্যার আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম মার্চের মধ্যে শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। যদি এ সময়ের মধ্যে শেষ না হয় তাহলে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনে যাব।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!