ইনফেকশন হলে অগ্নিদগ্ধ রোগী কেউ বাঁচবে না—চট্টগ্রাম মেডিকেলে ডা. সামান্ত লাল

শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউস্টিটিউটের প্রধান ডা. সামান্ত লাল সেন বলেছেন, ইনফেকশন হলে বার্ন রোগীকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

তিনি বলেন, বার্ন রোগীদের মারা যাওয়ার একটাই কারণ— ইনফেকশন। ইনফেকশন হলে বার্ন রোগীদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। একটা ছোট বার্ন বড় হয়ে যায়, যদি ইনফেকশন হয়।

সোমবার (৬ জুন) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে আহত রোগীদের দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. সেন বলেন, আমরা এখানে এসে যা দেখলাম, কিছু রোগীকে ছেড়ে দেওয়া যাবে। তাদের অল্প বার্ন এবং চোখের সমস্যা আছে। এখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। একটা ফলোআপ চিকিৎসায় তাদের রাখা হবে। এটা আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে। যখন অ্যাক্সিডেন্টটা হয়, একটা ব্লাস্ট হয়। ধোঁয়া মানুষের চোখে লাগে, শ্বাসনালীতে চলে যায়। অনেকে তাকাতে পারছে না।

আরও পড়ুন: ‘দুষ্টুমিতে কথা কাটাকাটি’ বন্ধুর বুকে ছুরি চালাল বাল্য বন্ধু

তিনি বলেন, কিছু রোগীকে গতকাল হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা ভালো না। এখান থেকে আমরা তিনজন রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই। বার্ন আইসিইউ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে বার্ন আইসিইউ নেই। নরমাল আইসিইউ। তাই সেখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব রোগীর আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। শরীর ফুলে যাবে।

চমেক হাসপাতালে বার্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বার্ন রোগীদের যে চিকিৎসা হচ্ছে এবং যেসব চিকিৎকরা আছেন, চিকিৎসাটা ঠিক আছে। কিন্তু কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। যেটা এখনো এখানে হয়নি। আমরা যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তাদের দিতে পারি, তাদের কিন্তু শিফট করার প্রয়োজন হতো না।

আমরা আজকে এখানে আসার উদ্দেশ্যই হচ্ছে রোগীদের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান ঠিক করতে। মানে কীভাবে এগোবো, কী করা যায় এই রোগীদের নিয়ে। আমরা কিছু ডিসিশন নিয়েছি। একটা কর্মপন্থা আমরা ঠিক করেছি যে, আমরা রোগীদের সাথে কথা বলবো। তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে বলব। তারা যদি ঢাকায় যেতে চায়, ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর যারা আছে, তারা আছেই- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বাইরেও কিছু রোগী আছে। সিএমএইচের আইসিইউতে দুজন রোগী আছে৷ এদের অবস্থা খুবই খারাপ। বাইরে যারা আছে তাদের অবস্থাও খারাপ। প্রাইভেট ক্লিনিকে যারা, সেখানেও রোগীরা আইসিইউতে আছে, ভালো না।’

আরও পড়ুন: ৩ চোরই জাহাজের তেল নিয়ন্ত্রক, নৌ পুলিশের ‘চোখ রাঙানিতেও’ থামেনি তেল চুরি

তিনি আরও বলেন, একটা বার্ন রোগী যদি ১০ শতাংশ পুড়ে যায়, তখন সেটা মেজর হয়। বার্ন রোগীর চিকিৎসা খুবই কম্প্লিকেটেড। আইসোলেশন তাদের দেওয়া হয়। আমরা যেভাবে করছি, এভাবে চিকিৎসা হয় না। যাই হোক, যেহেতু আমাদের কিছু করার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ন রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে একটা কথা বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর যেন বার্ন রোগীর চিকিৎসায় কোনো অবহেলা না হয়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু চিকিৎসা দেওয়া দরকার, ততটুকু দেওয়া হবে। আমরা এখান থেকে গিয়ে ওনাকে বলবো, কী করা উচিত, আর উচিত না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ১০০ বেডের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট করার কাজ চলছে। আমরা কিন্তু গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এটার পেছনে কাজ করছি। জায়গা নিয়ে একটা বিভ্রাট ছিল এখানে। এখান থেকে চারটা প্রপোজাল পাঠানো হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে।

চারটা হলো— গোয়াছি বাগান এলাকা, একটা প্রধান ছাত্রাবাসের পশ্চিম পাশে, অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং অ্যাকাডেমিক ভবনের পশ্চিম পাশে। এর মধ্যে প্রধান ছাত্রাবাসের পশ্চিম পাশে চায়নারা করতে রাজি হয়েছে। তারা জায়গা দেখতে চট্টগ্রামে আসবে। তারা আমাকে জানিয়েছে।

এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসকরাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!